একটি স্বৈরাচার একটি দেশের প্রতিটি মানুষের স্বাধীনতা ধ্বংসের প্রধান কারিগর;
একটি স্বৈরাচার নিপীড়িত জনতার বুকের ওপর চেপে রাখা জগদ্দল পাথর।।
স্বৈরাচার মানে হলোÑ অনিয়ন্ত্রিত মানুষের অবাধ স্বেচ্ছাচার,
অবিবেচক, স্বার্থপরের ভ্রষ্ট আচারে নষ্ট করা ন্যায্য অধিকার।
স্বৈরাচার বাস করে মানুষের আচারে, রাষ্ট্রে, সমাজে, পরিবারে।
সকল স্তরে স্বৈরাচার মানুষের জীবন নষ্ট ও অতিষ্ট করে।
একটি স্বৈরাচার সভ্য দুনিয়ার অসভ্য আচার, অশ্লীল, অভব্য, বর্বর, নিকৃষ্ট, ইতর।।
একটি পরিবারের ভেতরে যে ভাই স্বৈরাচার লালন করে,
বোনের হক মেরে সে ভাই সারাঘরে উঃচ্চৈস্বরে আস্ফালন করে।
সমাজের যেইসব মাতুব্বর মনের ভেতর স্বৈরাচার পালে,
একটি প্যাকেট বিড়ি ঘুষ পেলে, হুমকিতে-ধমকিতে কথা বলে।
স্বৈরাচার বাস করে চিন্তার ভেতর, নষ্ট করে অন্তর, সকলের তরে সুস্পষ্ট ক্ষতিকর।।
এমনি এক অসভ্য স্বৈরাচার যখন রাষ্ট্রের ক্ষমতা পায়,
রাষ্ট্রের সমস্ত নিয়ন্ত্রণ জোড় করে নিজের ঘাড়ে নিতে চায়;
জনতার কথা শোনাই তার দায়, আর যদি বিরুদ্ধমত পায়,
ধরে জেলে ভরে আর ধায়, বিচারকের আগেই লিখে দেয় রায়।
লোভ দেখায়, ভয় দেখায়, যে করেই হোক সে চায়, সব লোক হোক তার হুকুমের চাকর।।
স্বৈরাচারি সরকারের দুইটি রাশি: কর্তৃত্ববাদী ও সর্বগ্রাসী।
কর্তৃত্ববাদের চাপরাশি খুব করে চায় বিরোধী দলের ফাঁসি;
তাদের সংজ্ঞায় বিরোধী দল-মতের মানুষের অধিকার নেই,
জীবন নেই, রাষ্ট্র নেই, সমাজ নেই, পরিবার-সংসারও নেই।
নিজপথ নিরাপদ করার তরে, বিরোধী-দমন করে, স্বৈরাচার খোঁড়ে গণতন্ত্রের গোর।।
সর্বগ্রাসীরা তো আরো একধাপ বেশি ভয়ঙ্কর আর সর্বনাশী,
তাদের চাপরাশি হামেশা দিতে চায় জনগণের গলায় রশি।
তারা চায় সমগ্র জনতা কথা বলুক তাদের শেখানো ভাষায়,
কেউ যদি তা না চায়, তাকে ‘গাদ্দার’ ট্যাগায় আর বিপদে ফাঁসায়।
এরা দেশকে ভাবে শুধু নিজের ঘর, স্বাধীনতাকে শুধু নিজের ভেবে জনতাকে করে পর।।
রাষ্ট্রের ক্ষমতায় স্বৈরাচার মানেই হুমকিতে জনতার অধিকার,
যেমনই হোক তার প্রকার, হুমকি সে জনতার স্বাধীনতার;
স্বৈরাচারকে শোধরানোর তরে মহোত্তম নায়কেরা যুদ্ধ করে,
আত্মমর্জাদা বিসর্জন করে লোভী আর ভীতুরা চামচামি করে;
স্বৈরাচার রোগে যারা ভোগে, বিবেকের বিলোপে কাজ করে আবেগে, খনন করে নিজ কবর।।
উৎস:
রচনাকাল: ১৫ আগস্ট ২০২৪
সাহিত্য শৈলী: কবিতাটির লিরিক পঙক্তিগুলো ৩৪ মাত্রার এবং সাধারণ পঙক্তিগুলো ২৪ মাত্রার অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রচিত।
টীকা ভাষ্য
(ক) স্বৈরাচার
স্বৈরাচার শব্দটির মানেÑ স্বেচ্ছাচার। বিবেক-বোধ পরিহার করে কেউ যদি জোর করে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী মানুষের সাথে আচরণ করে সেই আচরণই স্বৈরাচার। যে ব্যক্তি স্বৈরাচারী আচরণ করে, সেই ব্যক্তিকে বোঝাতেও ‘স্বৈরাচার’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। রাজনীতির ভাষায় ‘স্বৈরাচার’ বলতে বোঝায় কিছু সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যযুক্ত শাসনব্যবস্থা, এটাকে ‘স্বৈরতন্ত্র’ বা ‘স্বৈরশাসনব্যবস্থা’ও বলে। আবার স্বৈরাচার বলতে স্বৈরশাসনব্যবস্থার প্রধান কর্তৃত্বস্থাপনকারী রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানকেও বোঝায়। কবিতাটিতে ‘স্বৈরাচার’ শব্দটি বিভিন্ন পঙক্তিতে বিভিন্নভাবে উপরিউক্ত সব ক’টি অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে। যাহোক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা স্বৈরশাসনব্যবস্থার নি¤œরূপ বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেন:
(খ) কর্তৃত্ববাদ
এটি স্বৈরাচারের একটি ধরণ। এই ধরণের শাসকেরা জনগণের ব্যক্তিজীবন ও নাগরিক অধিকারে হস্তক্ষেপের চেয়ে ‘বিরোধী দল’ দমন করায় বেশি ফোকাস করে। স্বৈরাচারের আদর্শ মানার ক্ষেত্রেও তারা ছাড় দেয়। তাদের মূল লক্ষ্য বিরোধী দল দমন করে রাষ্ট্রব্যবস্থার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়া।
(গ) সর্বগ্রাসীতা
স্বৈরাচারী সরকার যখন রাষ্ট্রব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি জনগণের ব্যক্তি-স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে, সরকারের আদর্শ মানতে বাধ্য করে, এবং বিরোধী দল দমনের পাশাপাশি যেকোনো ভিন্নমতই দমন করার চেষ্টা করে, তখন তাকে সর্বগ্রাসী সরকার বলে। এই ব্যবস্থায় দেশের স্বাধীনতা ভোগ করে কেবল স্বৈরাচারী সরকার ও তার দোসররা। সাধারণ জনগণ পরাধীন জীবন-যাপন করে।
তথ্যসূত্র
1. Gibbons, M. T., Coole, D. H.; Ellis, E., and Ferguson, K., eds. (2014). The Encyclopedia of Political Thought. Wiley Blackwell. doi:10.1002/9781118474396. ISBN 978-1-118-47439-6.
2. Golosov, G. V. (2021). Authoritarian Party Systems: Party Politics in Autocratic Regimes, 1945-2019. World Scientific. ISBN 978-1-80061-116
3. Schmidt, M. G. (2016). Regime Types: Measuring Democracy and Autocracy. In Keman, H. and Woldendorp, J. (eds.). Handbook of Research Methods and Applications in Political Science. Edward Elgar Publishing. pp. 111–126. ISBN 978-2-01-694428-8.
4. Johnson, P. M. (n.d.) A Glossary of Political Economy Term. Retrieved from https://webhome.auburn.edu/~johnspm/gloss/