বাংলাদেশে এখন ভারতের পুতুল সরকার নেই। জুলাই বিপ্লবে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জনের পর ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও পাল্টে গেছে অনেক হিসাব-নিকাশ। তাই, ভারতের বিভিন্ন পক্ষ দেশটির জাতীয় স্বার্থ এবং বিভিন্ন দলের দলীয় স্বার্থকে সুমুখে রেখে বাংলাদেশকে নিয়ে কষছে বিভিন্ন রকম হিসাব নিকাশ। আর, ৩৬ জুলাইয়ের পরাজিত অপশক্তিও খুঁজছে নানান ফাঁকফোঁকর। ত্রিপুরায় কয়েকটি বাঁধ বন্যার পিক আওয়ারে খুলে দিয়ে বাংলাদেশের ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা জেলায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা নিয়ে ইতোমধ্যেই জনমনে চলছে উত্তেজনা। এই ঘটনায় ভারতের দায় আসলেই কতটুকু, সেটা যেমন বিশ্লেষণ করা জরুরি, তার পাশাপাশি আমরা এর প্রতিক্রিয়ায় কী করতে পারি আর কী করতে না পারি, সেটাও বিশ্লেষণ করা জরুরি। উত্তেজনার চরমাবস্থা তৈরি করার পূর্বে আমাদের গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা জরুরি, ভারত আমাদের আর কী কী ভাবে বিপদে ফেলতে পারে, সেগুলোর প্রতিবাদে আমরা কী কী করতে পারি, আমরা কীভাবে ভারতকে বিপদে ফেলতে পারি এবং এর প্রতিক্রিয়ায় ভারত কী কী পদক্ষেপ নিতে পারে। সব নিকেশ চূড়ান্ত করে আমাদের রাষ্ট্রীয়, জনগণ, সুশীল সমাজ, সাইবার যোদ্ধা সকলের যার যার অব্স্থান থেকে এমন লড়াই শুরু করতে পারি, যেই লড়াইয়ের একমাত্র ফলাফল: আমাদের বিজয়। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের উত্তেজনাকে কাজে লাগিয়ে প্রতিপক্ষ যেন প্রতিকূল গেম খেলতে না পারে, সেই কৌশলও কিন্তু থাকতে হবে আমাদের।
১. বর্তমান বিশ্বরাজনীতির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের গুরুত্ব:
বর্তমানে চীন, রাশিয়া, ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটা বহুমুখী প্রতিযোগিতা ও সহযোগিতার সম্পর্ক বিদ্যমান। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের থুকিডাইডিস ট্র্যাপের কারণে নিকট ভবিষ্যতে একটা বড় সংঘাতের সম্ভাবনা রয়েছে (ব্রহ্ম চেলানি, ডেনি রয়, প্রমুখ এই মতের সমর্থক) । যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাতে ভারতকে পাশে পেতে চায়; এবং চীন পাশে পেতে চায় রাশিয়াকে। ভারত এই অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি মিত্র না হয়ে একটি কৌশল নিয়েছে। সেটা অনেকটা গাছেরও খাবে, তলারও কুড়াবে_ এর মতো। অর্থাৎ, ভারত একই সংগে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন কোয়াড, আইপিএফ-এও আছে; আবার চীন-রাশিয়ার ব্রিকস, এসসিও জোটেও আছে। রাশিয়ার তেল ভারত কিনছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা কাজে দিচ্ছে না। তবু, যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে কিছু বলছে না, কারণ ভারত বিগড়ে গিয়ে চীন-রাশিয়ার অক্ষে ঢুকে গেলে খেলা শেষ ।
এমতাবস্থায়, ভারতকে কাবু করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের একটা হাতিয়ার হতে পারে বাংলাদেশ। কিন্তু, মনে রাখতে হবে; যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে পুরোপুরি ভারতবিরোধী রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায় না।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিপ্রায়, বাংলাদেশ ভারতকে ততটুকুই চাপ দিবে, যতটুকু চাপ দিলে ভারত পশ্চিমাবলয়ের পক্ষে থাকে। এই কাজে এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বাংলাদেশের বিকল্প নাই। কারণ, পাকিস্তান ইতোমধ্যে চীনা ঋণের বেড়াজালে এমনভাবে আক্রান্ত, যে দেশটি সংকটকালেও চীনের বিরুদ্ধে যেতে পারবে না; এবং দেশটি অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক চাপের কারণে ভারতের বিরুদ্ধে সামরিক ঝুঁকি তৈরি করার সক্ষমতা কমে গেছে।
২. বাংলাদেশ ভারতের বিরুদ্ধে কী ঝুঁকি তৈরি করতে পারে?
(ক) ট্রানজিট চুক্তি বাতিল:
(খ) ২৬ লক্ষ ভারতীয় কর্মী
(গ) বাংলাদেশে চীনা/ মার্কিন ঘাটি
(ঘ) সাইবার হামলা
(ঙ)