এই যে দেখো, কবিতাখানা লিখছি আমি যত্ন করে,
আত্ম করে, আমার মনের মত করে তুলছি গড়ে।
এই যে দেখো, সন্তানকে মোর করছি লালন কেমন,
চিত্তভরে যত্ন করে দিচ্ছি_ স্নেহ পাচ্ছি শিহরণ।
এমনটি করে ওরে কভু শান্তি কি পাই এ অন্তরে,
পরের কারখানায় নিত্যদিন চাকরিকর্ম করে?
এই যে দেখো, কাপড় বুনি, কে পরবে তা কি জানি?
বেশি লাভে বেঁচলে জামাখানি, মোর লাভ কতখানি?
লক্ষ্য করো, এই জামাটার কাপড়ের দাম দশ টাকা,
কারখানা আর সব স্থাপনার ভাড়া দশ টাকা,
বিজ্ঞাপন, পরিবহন ও বিবিধ খরচ মিলে,
জামাটির উৎপাদন খরচ ত্রিশ টাকা সাক‚ল্যে।
ধরো, জামাখানা বিক্রি হলো পঞ্চাশ টাকায়,
বিশ টাকা এতে লাভ হলো, আমি পেলাম কত তায়?
হিসাবটা করো একমাসে মজুরি আমার, আর
একমাসে আমার তৈরি মোট জামার সংখ্যাটার!
লক্ষ্য করো, আমার শ্রমের মূল্যে প্রাপ্ত অর্থকড়ি,
আমি পাচ্ছি না যে কানাকড়ি, মালিকের বাড়ছে ভুড়ি;
আমার শ্রমের হচ্ছে শোষণ! কী এক নিপীড়ন!
এতে মোরে কুড়ে খাচ্ছে বিচ্ছিন্নতার হুতাশন!
কেন হচ্ছে এমন? একের দ্বারা অন্যের শোষণ?
চলো ইতিহাসের দিনক্ষণ ফিরে দেখি এখন:
বহু যুগ আগে আমাদের বসতিঘর ছিল না,
বাজার ছিল না, কোনো কিছু কিনতাম নাও, বেচঁতাম না।
গাছের ফল-মূল-পাতা আর পশুপাখি ধরে ধরে
খেতাম আমরা, আর লড়তাম পথে ও প্রান্তরে,
দল বেঁধে, গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে, সবাই সবার হয়ে;
নিজেদের জন্য বানাতাম পণ্য যত্ন-আত্তি লয়ে।
সেই শোষণহীন সমাজে নিজের জন্য নিজকাজে,
সুগভীর মমত্ব ছিল কী যে! প্রশান্তি ছিল কী যে!
তারপর, কেমন যেন করে সেই সুখ ঘুচে গেল,
দাসত্ব আসল! আমাদের হারাল সব হারাল!
খোদার এই মুক্ত জমিনে শস্যবীজ বুনলাম,
কোথা থেকে মালিক বেড়–লো! আমরা প্রজা হলাম!
আমাদের শ্রমে ও ঘামে ফলানো ফসলের ভাগ,
চাবুক চষে খাচ্ছিল বসে জমিদাররূপী বাঘ!
আমাদের সংগ্রামে জমিদার, সামন্ত ও সম্রাট
মরল, পালাল আর কেউবা নিল নতুন পাঠ।
বড় বড় কারখানা হলো, আর এলো শিল্পবিপ্লব,
বেনে ও শিল্পপতিরা আজ সামন্তের কুশীলব;
রাজার নাতিরা যেন রাজনৈতিক দলের মাথা,
গণতন্ত্রে আজ আছে যে তাই, রাজতন্ত্রে ছিল যা তা!
টাকা আছে যার বসে বসে কামাচ্ছে টাকা সে-ই;
বড় বড় স্থাপনা সব হচ্ছে আমাদের রক্তেই।
এই যে দেখো সিস্টেম! আমাদের শ্রমে গড়া ধন
খাচ্ছে, পরছে আর গড়ছে পুঁজি পাহাড়ের মতন;
পুঁজিবাদে এটাই শোষণের ভিত্তি, এটাই মূলসূত্র,
রাজতন্ত্রসম গণতন্ত্র পুঁজিবাদেরি যে পুত্র!
শোষণযন্ত্র পালে যে রাজনীতি-অর্থনীতি-সংস্কৃতি,
সেইসব উপরিকাঠামো পুঁজিবাদেরই নাতিপুতি।
আমার করের টাকায় গড়ে যারা বিলাসভবন,
সেইসব দুর্নীতিবাজ করছে আমার রক্তশোষণ;
গণতন্ত্রের নামে গড়ে ওঠা স্বৈরাচার চোরতন্ত্র
শোষে আমাদের বহু নলে, বাহুবলে হৃদযন্ত্র
মোর করছে বিকলপ্রায়, তারি প্রতিবাদ করায়,
আমার রক্তে কেনা বুলেট পড়ছে আমার মাথায়।
কালাকানুন আর চোট্টামি আইনের গ্যারাকলে,
করের বোঝা আর মূল্যস্ফীতি মোরে নিচ্ছে অতলে!
স্বৈরাচারার্থের অর্থনীতি করছে ডাবল শোষণ,
ট্রিপল নির্যাতন, আর কোয়াড্রাপল নিপীড়ন!
দেখো, আমি প্রলেতারিয়েত, আমি নিশ্চিত শোষিত,
আমি নিপীড়িত, অত্যচারিত ও প্রত্যক্ষ প্রতারিত।
দেখো, আমি শ্রমিক, আমি শোষিত প্রলেতারিয়েত, সত্য।
আমার টাকায় পোষা পুলিশ আমাকেই মারে নিত্য!
দেখো, আমি প্রলেতারিয়েত ছাত্র_ এটা আজ স্পষ্ট,
আমার হিস্যা ও সুযোগ করছে ভাগযোগ ও বিনষ্ট!
আমি কৃষক, কামার, কুমোর, মুচি, তাঁতি ও জেলে,
আমি মূল্য পাই না আমার উৎপন্ন পণ্য-ফসলে!
আমার দেওয়া চাঁদায় চলে এই প্রজাতন্ত্র।
আমি তাই ভেঙ্গে দিব সব শোষণ-নিপীড়নের যন্ত্র।
_ স্লোগানে স্লোগানে গান তোলো, আজ অভিযান তোলো,
“জ্বালোরে জ্বালো, আগুন জ্বালো, জ্বালো, জ্বালো, জ্বালো, জ্বালো!”
ইট ইজ মাই সার্ভাইভাল, ইট ইজ মাই প্রেস্টিজ,
সে, “উই ওয়ান্ট জাস্টিস, ইকুইটি অ্যান্ড জাস্টিস”,
“দিয়েছি তো রক্ত, আরো দেবো রক্ত, আমি দেবো রক্ত,”
যতদিন দেহে আছে প্রাণ, আমি আছি শক্ত,
নিপীড়ককে করে যাবো বিরক্ত, গড়বো প্রতিবাদ শক্ত,
ভীত হবে শোষকের ভক্ত, এতেই জাতি হবে মুক্ত।
এবার “রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়”,
মোর রক্তই অস্ত্রর ন্যায়, মোর মৃত্যুই অস্ত্রর ন্যায়!
বের হও জনগণ হাতে কেতন, লাঠি, লন্ঠন
বল, “অ্যাকশন অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন”।
সেই শয়তান যারা আমার খায় আমার পরে,
আর আমার বুকেই গুলি করে, আজ তাদের উপরে,
আমি মারবো এমন মরণ বোম্ব,
আমার মৃত্যুতে আজ হবে খতম,
স্বৈরাচারের
এ সংসারের।
ছন্দ: অক্ষরবৃত্ত, পূর্ণ পঙক্তি: ১৮ মাত্রা
প্রথম রচনা: ২০ জুলাই ২০২৪, সর্বশেষ সম্পাদনা: ২৭ আগস্ট ২০২৪