চল চল, কথা বল, মুক্তির কথা বল।
চল চল, কথা বল, সত্যের কথা বল।
চল চল, কথা বল, জীবনের কথা বল।
মরণের কথা বল, নিজ ইতিহাস বল।
চল চল, কথা বল, চল চল, কথা বল।
কথা, কথা বল, কথা বল, কথা বল।।
মুক্তিযুদ্ধে অবিচার প্রতিরোধে আমরাই করলাম প্রাণদান;
বৈষম্যের গতিরোধে গণযুদ্ধে সকল জনতা রাখলাম অবদান;
রুখতে অনাচার-শোষণ-নিপীড়ন-অত্যাচার,
সবার জন্য গড়তে সাম্য-মর্যাদা-সুবিচারÑ
দুইটি গণযুদ্ধে আমরা সকল, সে যে ছিল জনতার বল!
মুক্তিযুদ্ধে একক কৃতিত্ব দাবি করে কে? তার বিরুদ্ধে কথা বল।
আজ জেগেই আছি আমরা জনতা সকল।।
মুক্ত-স্বাধীন দেশে মুক্ত বাতাসে নিত্য জাগে মুক্ত-নতুন আশা;
মুক্তবাংলার মুক্ত সরকারের নিকট আমাদের মুক্ত ভরসা।
তিয়াত্তরে অশুভ, অমুক্ত, ছাপ্পা নির্বাচনে,
আর চুয়াত্তরের তিক্ত দুর্ভিক্ষের কারণে,
জনমনে ঢুকল হতাশা, টুটল ভরসা, ভাবল- এই মুক্তি কি মাকাল?
পঁচাত্তরে এলো বাকশালÑ এ কী হাল! মুক্তমনে কথারই আকাল!
রুদ্ধ হলো সকল বিরুদ্ধ মত-দল।।
সহসা এবার রাত্রির মাঝে রাত্রি যে এলো আঁধার হলো দ্বিগুণ;
সপরিবারে নিজনীড়ে শেখ মুজিবুর রহমান হলেন নিষ্ঠুর খুন!
মুমূর্ষু এক মুজিবের ঐ লোকান্তরে,
লাখ মুজিবের ভ্রুণ রইল ঘরে ঘরে,
বিনাবিচারে মেরে, বিচারের আবেদন দিল যুগান্তরের ঐ দরবারে;
রাষ্ট্র হলো নড়বড়ে, আগস্ট ও নভেম্বরে তিন দফা ক্যুর জেরে,
সেনারা নিল রাষ্ট্রযন্ত্রের কল।।
রক্তপাতের ওপর দিয়া শাসন নিলেন মেজর জিয়া, করলেন উন্নয়ন;
সেনাশাসনের শেষে, আসলেন গণতন্ত্রের বেশে, করে দলগঠন।
মুক্ত হলো বহুদলীয় গণতন্ত্রের দ্বার,
রাজাকারসহ সবাই পেল রাজনীতির অধিকার;
এলো বি.এন.পি., ফিরলো আওয়ামী লীগ-মুসলিম লীগ-জামাতে ইসলামী…,
হঠাৎ গোলার আঘাতে খুন রাষ্ট্রস্বামীÑ রাজনীতির কি ইতরামি!
কত স্বাধীন ছিলি আর হলি, সেটা বল।।
হঠাৎ এলো যে এরশাদ, বরবাদ হলো জনতার অধিকারের স্বাদ,
গণতন্ত্র গেলো বাদ, এলো ধর্মের ফাঁদ, নতুন দলের আবাদ,
আর উন্নয়ন প্রচারের আহ্লাদ জনগণ
করেনি উদযাপন, বরং মানেনি স্বৈরশাসন;
তার কারণ- কথা বলার স্বাধীনতার জন্য যে জাতি জান দেয় বারবার,
সে জাতি ধর্মের ধুয়ায় তো ভুলবার নয়, সে জাতি মানে না স্বৈরাচার;
নব্বইয়ে আবার রক্তলাল, সফল।।
একানব্বই থেকে দুই হাজার ছয়, নির্বাচনী গণতন্ত্র ছিল নিশ্চয়।
জনগণ জানতো: হয় আওয়ামী লীগ, নয় বিএনপিÑ এমনি তো হয়!
নেতারা ছিল ভোটের আগে হাজি, ভোট ফুরালে পাজি;
জনতাকে বলতো, “বাবাজী, আমি আজি সব দিতে রাজী।”
নানাকাজের কাজী, সেইসব গণতন্ত্রের গুরুজীরা গুণ্ডা পুষতো;
তবু তো ভাবত ভোটের কথা; আর জনতার কথা ক্ষণে ক্ষণে বলতো;
এই ছলে কিছু তো ছিল জনতার বল।।
আওয়ামী লীগ-জামাতে ইসলামিÑ সকল দলের জনতার হলো একতা;
নিরপেক্ষ নির্বাচনে তত্ত¡াবধায়ক ব্যবস্থায় হলো আস্থা।
দুই হাজার সাতে, এ ব্যবস্থায় গঠিত সরকারে
দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর অনাস্থার জেরে
জারি হয় জরুরি অবস্থা; বেসামরিক মোড়কে এ দেশ চালায় সৈনিক;
দুর্নীতি দমনে জনতা খুশিÑ ঠিক, তবু তারা নির্বাচন চায় দৈনিক;
গণতন্ত্র ফেরাতে বয় রক্তঢল।।
নির্বাচনে বিপুল জনপ্রিয়তায় আওয়ামী লীগ আসে ক্ষমতায়;
কার যেন ইশারায় বিডিআর বিদ্রোহে দেশপ্রেমিকদের জান যায়!
কতক ব্যর্থতায় ভীত আওয়ামীলীগ সরকার
বাতিল করে দেয় তত্ত¡াবধায়ক ব্যবস্থার;
দুই হাজার চৌদ্দ সালে নির্বাচনে একশত তেপ্পান্নটি আসনে
মহাজোট যেতে ভোটবিহনে, জনতার অধিকার লুট হয় প্রহসনে,
কমে যায় জনতার কথা বলারই বল।।
নিরপেক্ষতা হারায় নির্বাচন কমিশন, সবখানে দলীয়করণ,
রায় লিখতে কাঁপে বিচারকগণ, আর গলার জোর হারায় জনগণ।
দুই হাজার আঠারো সালে শেখ হাসিনার আশ্বাসে
নিস্তেজ বিএনপি কামালের সাথে জোটে ভোটে আসে;
আগের রাতেই নির্বাচন, ভোট দিয়েছে মৃতগণ, ধোকা খায় জনগণ,
নৌকার ভোটারটিও ডুকরে কাঁদে তখন, ভোট দিতে না পারার বেদন!
এভাবে নীরবে জনতা কী হারাল তা বল।।
চারিদিকে ভয়ের আবহ! কিছু বলতে গেলেই ‘শিবির’ ট্যাগ! জনতা নিস্পৃহ!
অন্তরে অগ্নিদহ! কেউ কিছু কহ? পারবে না, পরিস্থিতি ভয়াবহ!
শুনছি, ওরা চীন-ভারত-রাশিয়াকেও কিনে নিয়েছে!
দরকারে ছাত্রলীগকে ‘শিবির’ ট্যাগে পেটাচ্ছে!
চব্বিশে ওরা করল নির্বাচন আয়োজন, জনতা করল বর্জন;
তাতে অর্জন: আমরা অন্যায়ের সাথে নেইÑ এটাই নীরব গর্জন;
সরবে কাঁদতেও পারলি না কেন, তা বল।
চাইলাম কোটার যৌক্তিক সংস্কারÑ এ আমার নাগরিক অধিকার,
স্বৈরাচার ট্যাগালো আমায় ‘রাজাকার’; আমায় নাগরিকই মানছে না আর!
আমায় মেরে খুনিরা করে হামলা-মামলা-হুঙ্কার,
বুঝলাম- জনতার স্বাধীনতার কিছুই নেই আর!
বুক পেতে করলাম গুলির গতিরোধ; প্রতিরোধ, মুক্তিফেরাতে ফের;
রক্তের দাবানলে সারাদেশ উঠল যে জ্বলেÑ বাংলাদেশ হলো আমাদের;
মুক্তিনাশিনী পালাল দেশ করে অচল।।
সরকার নেই, সংবিধানও নেই,
আগের বাংলাদেশে ফেরার সুযোগ নেই;
বিপ্লবী জনতা মুক্ত দেশ করল দখল_
এ যে জনতার মুক্তির আকাক্সক্ষার বল,
এবার তুই পূর্ণ স্বাধীনতায় কথা বল।।
ঐতিহাসিক পটবিশ্লেষণ:
সাহিত্য বিশ্লেষণ:
কবিতাটি মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত। কবিতাটির প্রথম ও শেষ স্তবকের সবগুলো পয়ার ১৬ মাত্রার। মাঝের প্রতিটি স্তবকে পঙক্তিগুলোর মাত্রাবিন্যাস ২৮/২৮/২০/২০/২৮/২৮/১৬ আকারের। সবমিলে কবিতাটিতে ২০২৪টি মাত্রা আছে, যা তৃতীয় স্বাধীনতার ইংরেজি সন ২০২৪-কে নির্দেশ করে।