জাগো বাংলাদেশ জাগো

জাগো বাংলাদেশ জাগো

জাগোরে বাংলাদেশ জাগো,
বাঁচতে যদি চাও এবার, বাঁচার জন্য জাগো,
জাগোরে বাংলাদেশ জাগো,
জাগোরে জাগো, জাগোরে জাগো।।
চোখ মেলে দেখো হে এবার,
পঁচিশে মার্চের মতো হায়নারা ফিরেছে আবার ,
মিথ্যে স্বাধীনতার মিথ্যে মেকি জাল বুনে দেখো,
                                  তারা করছে কী কারবার!
এ হায়েনার দাঁত দেখো এহিয়ার দাঁতের চেয়ে বড়,
এ জানোয়ারকে রুখতে এবার তোমাকে ভেঙ্গে গড়ো।
জাগোরে বাংলাদেশ জাগো,
হায়েনাকে রুখে বাঁচাতে নিজেকে তুমি এবার জাগো,
জাগোরে বাংলাদেশ জাগো,
জাগোরে জাগো, জাগোরে জাগো।।
সবার জন্যই সাম্য, সুবিচার, মানবিক মর্যাদা আর
সামাজিক সুবিচার আনার উদ্দেশ্যে সেইবার
মহান মুক্তিযুদ্ধে, উনিশ শ একাত্তর সালে
আপামর বাংলাদেশির সম্মিলিত যুদ্ধের ফলে
পেলাম স্বাধীনতা, অধিকার আর সাম্যের বুলি।
আজ এই দেশে আমার বুকে চলছে পুলিশের গুলি!
জাগোরে বাংলাদেশ জাগো,
জাগবার যদি না পারো তবে বাংলাদেশ ছেড়ে ভাগো।
জাগোরে বাংলাদেশ জাগো,
জাগোরে জাগো, জাগোরে জাগো।।
ওহে মহান বীরের জাতি,
বাঁশের কেল্লার বীর মহান তিতুমীরের জাতি,
সূর্যসন্তান সূর্যসেন-ক্ষুদিরামের জাতি
বাংলাচুক্তির রূপকার ঐ দেশবন্ধুর জাতি
হে আজাদ হিন্দ ফৌজের কারিগর ঐ নেতাজীর জাতি,
হে লাহোর প্রস্তাবের নেতা শেরে বাংলার জাতি,
অখÐ বাংলার নেতা সোহরাওয়ার্দীর জাতি,
‘‘আস্সালামু আলাইকুম” বলে স্বাধীনতা হাঁকা
              মওলানা ভাসানীর জাতি,
“এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম” ডাকা
নেতা শেখ মুজিবের জাতি,
ও “আই, মেজর জিয়াউর রহমান ডু হেরাবাই…”
ঘোষণায় উজ্জীবিত দৃঢ় বীর বাংলাদেশি জাতি।
সকল প্রকার বৈষম্য, শোষণ ও নির্যাতন
চিরতরে কবর দিবই আমরা এইবার এখন।
জাগো রে বাংলাদেশ জাগো,
পরকালে পিতার সাথে দেখা হলে জবাব কী দিবে গো।
জাগোরে বাংলাদেশ জাগো,
জাগোরে জাগো, জাগোরে জাগো।।
বাঁচতে যদি চাও আবার চোখ খুলে এবার জাগো,
দেখো এবার দেখো, আমাদের সংবিধান খুলে দেখো:
প্রস্তাবনা খুলে দেখো:
শোষণমুক্ত সমাজ, সামাজিক সাম্য, সুবিচারÑ
                              রাষ্ট্রের মূল লক্ষ।
দেখো এবার দেখো, সপ্তম অনুচ্ছেদ খুলে দেখো:
রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ,
আমাদের এই বাংলাদেশের মালিকও জনগণ।
ঊনিশ, আটাশ আর ঊনত্রিশ অনুচ্ছেদ দেখো:
“সুযোগের সমতা” একইসাথে আমাদের অধিকার,
আর স্পষ্ট মূলনীতি রাষ্ট্র পরিচালনার;
সংবিধানে বর্ণিত ‘অনগ্রসর’ ব্যতীত আর
কেউ কি থাকতে পারে ‘কোটা’ সুবিধা পাবার দাবিদার?
জাগোরে বাংলাদেশ জাগো,
বিবেক ও বিচক্ষণতার চোখ খুলে এবার জাগো।
জাগোরে বাংলাদেশ জাগো,
জাগোরে জাগো, জাগোরে জাগো।।
সংবিধানের আসল চেতনার বিরুদ্ধে গিয়ে,
একটি অন্তর্বতীকালীন আদেশকে টেনে নিয়ে,
তিপ্পান্ন বছর ধরে জনতার মুখ চেপে ধরে
আমাদের মানবাধিকার ধূলিসাৎ করে, ওরে
মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল এবার
টুটছে সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার।
জাগোরে বাংলাদেশ জাগো,
সংবিধানে প্রদত্ত অধিকার বাঁচাতে জাগো।
জাগোরে বাংলাদেশ জাগো,
জাগোরে জাগো, জাগোরে জাগো।।
মোরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে,
চাইলাম কিছু অধিকার সংবিধানের আশ্রয়ে,
চাইলাম কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কার,
হয়ে গেলাম বিএনপি, জামাত, শিবির ও রাজাকার;
শিক্ষা, শান্তি, প্রগতিÑ পতাকাবাহী ছাত্রলীগ,
আমায় পেটাতে নিয়ে এলো রড, লাঠি ও হকিস্টিক;
রক্তাক্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে গেলাম হাসপাতালে,
সেখানেও হামলা চালালো প্রগতিবাহী ছেলেপেলে,
স্বাধীন বাংলায় এ কী প্রহসন দেখছি আমি!
নিপীড়ক পায় পুরস্কার, মজলুম হয় আসামী!
জাগোরে বাংলাদেশ জাগো,
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অপচয় রুখতে জাগো।
জাগোরে বাংলাদেশ জাগো,
জাগোরে জাগো, জাগোরে জাগো।।
দেখোরে বাংলাদেশ দেখো,
কী করে বিচারের হয় খুন, দিব্যচোখে সেটা দেখো।
কী করে পবিত্র হাইকোর্টে মিথ্যের জাল বুনে,
অনধিকার রায় হচ্ছে সংবিধানের খুনে!
কী করে আমার অধিকারের সমাবেশে হচ্ছে গুলি,
আমায় ট্যাগানো হচ্ছে আমারি রক্তে কেনা বুলি!
আমার মালিকানার এ বাংলাদেশে আমাকে বলেছে
‘রাজাকার’; অধিকার পাবার সব পথ রোধ হয়েছে।
জাগোরে বাংলাদেশ জাগো,
অধিকার পাবার রুদ্ধপথ খুলতে এবার জাগো।
জাগোরে বাংলাদেশ জাগো,
জাগোরে জাগো, জাগোরে জাগো।।
ওঠোরে বাংলাদেশ ওঠো,
প্রাণ বাঁচাতে সংগ্রামের পথে ছোটো।
আমার অধিকার চাইবার পর করেছে হামলা,
অপরাধীরা করেছে মজলুমের বিরুদ্ধে মামলা,
করছে গুম, যেখানেই পাচ্ছে মারছে, গুলি করছে,
আমার ফেরার সব পথই আজ বন্ধ হয়ে গেছে।
জাগোরে বাংলাদেশ জাগো,
নিজের দেশে স্বাধীন বেশে বাঁচতে এবার জাগো।
জাগোরে বাংলাদেশ জাগো,
জাগোরে জাগো, জাগোরে জাগো।।

রচনাকাল: ১৫-২৬ জুলাই, ২০২৪। কবিতাটি কয়েকবার সম্পাদনা করে ফেসবুক ও ইউটিউবে আপলোড করা হয়। বারবার সম্পাদনার কারণে কবিতাটির অনেকগুলো ভার্শন অনলাইনে পাওয়া যায়। সর্বশেষ সম্পাদনা: ৩১ জুলাই ২০২৪।

ছন্দ: মাত্রাবৃত্ত (পূর্ণ পঙক্তি ২০ মাত্রা, অর্ধ পঙক্তি: ১০ মাত্রা)

দ্রোহের এমন আরো কবিতা পড়ুন

১. জাগো বাংলাদেশ জাগো 

২. মুক্তবাক: সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার কাব্যরূপ 

৩. কবিতা নয়, যুদ্ধে এসো 

 

author

রাজা আবুল কালাম আজাদ

Raja Abul Kalam Azad is a post-modern researcher, writer, journalist, environmental activist, and teacher. He completed his bachelor's and master's degrees in disaster management at the University of Dhaka. His various research articles have been published in reputed international journals. Currently, he is working as a teacher at a government school and serving as the coordinator of the Disaster Economics Unit of Disaster Perception, a Dhaka-based organization. He is the Secretary General of 'Muktatma Samiti' and one of the Members of the Independent Bangla Editorial Board.

এই ধরণের আরো...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial