গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা আর বাঙালি জাতীয়তাবাদÑ
এই নিয়েই মুজিববাদ।
গণতন্ত্র মানেÑ জনগণের জন্য জনগণের দ্বারা জনগণের শাসনে মন্ত্রÑ
মানবাধিকার যার অবিচ্ছেদ্য তন্ত্র।
সকল মানুষের সম-মর্যাদা ও সম-অধিকার দিতে দরকার ধর্মনিরপেক্ষতাÑ
এটা গণতন্ত্রেরই কথা।
মুজিবের সংজ্ঞায় ধর্মনিরপেক্ষতা মানেÑ ধর্মহীনতা নয়, ধর্মীয় স্বাধীনতাÑ
সকল ধর্মের অধিকারের সমতা।
মুজিবের বাঙালি জাতীয়তাবাদ মানেÑ বাঙালির অধিকার, বাঙালির ভাষা-সংস্কৃতি জোরদার,
বাঙালির বাংলাদেশ জোরওয়ার।
সমাজতন্ত্র মানেÑ সকল মানুষের সাম্যের আদর্শ, কৃষক ও শ্রমিকের শক্তি
মানুষের ওপর মানুষের সর্বপ্রকার শোষণ হতে মুক্তি।
মুজিবের সমাজতন্ত্র মানেÑ বেশি করে কর তুলে বড় করে বাজেট করে বড় বড় প্রকল্পের উন্নতি,
আর জাতীয়করণের অর্থনৈতিক নীতি।
শেখ মুজিব মানে সোহরাওয়ার্দীর শিষ্যত্ব, মুসলিম লীগ, আওয়ামী লীগ, ছয় দফা, মুক্তিযুদ্ধ আর বাকশালÑ
বিংশ শতাব্দীর বাংলায় রাজনীতির হালচাল।
সোহরাওয়ার্দীর শিষ্য মুজিব মানেÑ অধিকারের সংগ্রামে সদা হাজির এক বাঙালি মুসলমান যুবক বীর,
কলকাতা ও ঢাকার রাজনীতির ময়দানে তরুণ যুধিষ্ঠির।
মুসলিম লীগের সভ্য মুজিব মানেÑ দক্ষিণবঙ্গ পাকিস্তান কনফারেন্সের সভা,
আর সিলেটের গণভোটে পাকিস্তানের আভা।
আওয়ামী লীগের মুজিব মানেÑ মওলানা ভাসানীর মোনাজাত-বক্তৃতার সাথী
আর বাংলাদেশের স্বাধীনতার সারথী।
ছয় দফার মুজিব মানেÑ বাঙালির ম্যাগনাকার্টা, অধিকারের দাবি
পাকিস্তানের শোষণের জাল হতে বাঙালির বাঁচার দাবি।
ঊনিশ শত সত্তরে মুজিব মানেÑ নৌকায় ভোট
আর ভোটের অধিকারের জন্য ছোট।
একাত্তরের মুজিব মানেÑ বাঙালির প্রতীক্ষার কারণ, সাতই মার্চের ভাষণ,
আর বাঙালি মায়ের জায়নামাজের আসন।
স্বাধীন বাংলাদেশে মুজিব মানেÑ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে পুনর্গঠনের নেতা,
আর বাকশালের হোতা।
বাকশালের মুজিব মানেÑ দুর্নীতিরোধে খেই হারানো, অথৈ সাগরে পথ হারানো নাবিক,
নিজের ডাকা পথে নিজের চলা উল্টোদিক।
পঁচাত্তরের মুজিব মানেÑ গণতন্ত্র হত্যার বদলায় নরহত্যা, সপরিবার হত্যা,
পৈচাশিক সে গণহত্যা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মানেÑ দোষে-গুণে মানুষ
সত্য-মিথ্যে-মিথে গড়া বাঙালি মনে কল্পনার ফানুস।
মুজিব মহান মুজিবের গুণের জন্য,
অধিকার হারা, বঞ্চিত, মানুষের অধিকারে সংগ্রামের জন্য;
মুজিব নন্দিত মুজিবের সাহসের জন্য,
শক্তিশালী জালিমের জুলুমের বিরুদ্ধে সৎসাহসের জন্য।
মুজিব নিন্দিত মুজিবের স্বৈরাচারী আচরণের জন্য,
সংগ্রামী জনতার কণ্ঠরোধের জন্য, মানুষের বিরুদ্ধে অসৎ সাহসের জন্য।
হে মুজিবের সৈনিক,
কোন মুজিবে তুমি পূজা করো দৈনিক?
নায়ক মুজিবে পূজিবে যে, সে হবে নায়ক, দেশপ্রেমিক
খল মুজিবে পূজিবে যে, তার বিরুদ্ধে লড়বে লক্ষ লক্ষ মুজিবপ্রেমিক।
নায়ক মুজিব যদি হতে চাও,
মুজিববাদের মহান আদর্শগুলোর দিকে পা বাড়াও,
জনগণের অধিকারের সংগ্রামে পা বাড়াও,
জনগণের একজন হয়ে পা বাড়াও।
নায়ক মুজিব যদি হতে চাও,
যেসব মুজিবকে জনগণের বিরুদ্ধে দেখবে, তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও,
গণতন্ত্রের হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও,
ধর্মীয় স্বাধীনতায় বাঁধাদানকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও।
নায়ক মুজিব যদি হতে চাও,
জাতীয় স্বার্থের বিরোধীদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে যাও,
ভোটচুরির বিরুদ্ধে সংগ্রামে যাও,
বোরখায় বাঁধাদানকারীদের সংগ্রামে যাও,
কোটা সংস্কার আন্দোলনে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে যাও,
রামপালের বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে সংগ্রামে যাও,
অন্যায্য সব বিদেশি চুক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামে যাও,
সকল অনাচারের বিরু সংগ্রামে যাও।
আর খল মুজিব যদি হতে চাও,
ইচ্ছেমতো ভোট চুরি করে ক্ষমতায় যাও,
আমার মায়ের সন্তান খাও,
আমার ভাইয়ের রক্ত ঝড়াও,
ঐ রক্তসাগরে
নৌকায় চরে
নায়ক মুজিবকে ডাকবো,
আর তোমার মুন্ডু কাটবো।
রচনা: আগস্ট ২০১৮
রাজা আবুল কালাম আজাদ
Raja Abul Kalam Azad is a post-modern researcher, writer, journalist, environmental activist, and teacher. He completed his bachelor's and master's degrees in disaster management at the University of Dhaka. His various research articles have been published in reputed international journals. Currently, he is working as a teacher at a government school and serving as the coordinator of the Disaster Economics Unit of Disaster Perception, a Dhaka-based organization. He is the President of the Initiatives for Bangladesh Reform Research (IBRR), Member Secretary of Bangladesh Sangskritik Andolon, and Secretary General of 'Muktatma Samiti' and one of the Members of the Independent Bangla Editorial Board.
Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial