বাস্তববাদের বাস্তবতা

স্বাধীনতার স্বাদ

[প্রেক্ষাপট সদ্য সতেরো পেরুনো এক তরুণ মুস্তাকিল। সদ্যই ¯œাতকে ভর্তি হয়েছে। উদারতাবাদ, মার্কসবাদ, স্বাধীনতাবাদ ইত্যাদি নিয়ে কেবল সে সাগ্রহে শিখতে শুরু করেছে। যা কিছু সে শেখে, দাদুর কাছে গল্প করে। কী করে দেশের সব মানুষকে সত্যিকারের স্বাধীনতা দেওয়া যায়Ñ সেই তার ভাবনা। স্বৈরাচারের শোষণে নিপীড়নে অবরুদ্ধ জাতি। কিন্তু, সে এখনি শক্ত সংগ্রাম চায় না। তবু হঠাৎ করে কীসের এক মিছিলে বাবা-হারা মুস্তাকিল হারিয়ে যায়। সেই শোক-সন্তপ্ত রাতে মুস্তাকিলের বৃদ্ধ বিকলাঙ্গ পিতামহ স্বগোতক্তি করতে থাকে: ]

মুস্তাকিল, দাদুভাই, সারাদিন চলে গেল রাত হয়ে যায়!
এখনো মিছিল শেষ হয় নাই! দাদুভাই, তুই বাড়ি ফিরে আয়।
তোর বিধাব জননী দুপুরেও খায় নাই, তোর অপেক্ষায়।
মুস্তাকিল, দাদুভাই, মুস্তাকিল, দাদুভাই, বাড়ি ফিরে আয়।।

সাত-সকালে ঘাম-ভেজা কপালে তড়িঘড়ি উঠে চলে গেলি!
“আজকে স্বাধীনতা নিয়েই ফিরবো, দাদু” আমায় বলে গেলি!
রাত তো গভীর হলো, বারোটা তো পার হলো ঘড়ির কাঁটায়!
এখনো তোর ‘আজকে’ শেষ হয় নাই? তুই বাড়ি ফিরে আয়।।

ছোটবেলায়, আমারো দাদা ছিলÑ মোহাম্মাদ হযরত আলী,
আজাদীর কথা বলে তোর মতো মিছিলে ঘুরে বেড়াতো খালি!
দাদাজান বলতÑ “আজাদী এলে আমি আর মিছিলে যাব না।
তখন তো সত্য কথা বললে পেয়াদারা ধরে নিয়ে যাবে না।
আমার লাঙলে ফসল ফলাবো, আমার ফসল আমি খাবো।
দেশের রাজা আমরা বানাবো, কথা না শুনলে টেনে নামাবো।”
এই আশায় দাদা মিছিলে যায়; হঠাৎ পড়ে যায় দাঙ্গায়।
দাদা আর আসে নাই। তার রূপে তুই এলি ভাই, চলে আয়।।

দাদা চলে যাওয়ার পর, শুনলাম, এলো আজাদীর ভোর!
কী এক অধিকারের মিছিলে মরে গেল বাপজানও মোর।
হুঙ্কারে বলত বাজানÑ “অধিকার ছাড়া এই আজাদী ঝুটা;
আজাদীকে জনতার করে পেতে স্বৈরাচারের সংসার টুঁটা।
যে আজাদীর নতুন নিশানে জনগণের কোনো হিস্যা নাই,
সে আজাদী আমার নয়, আজাদীকে আমার করে পেতে চাই।”
আজাদীর পরেও আজাদীর তরে বাপজান মিছিলে যায়,
সেই যে গেল হায়! আর ফিরে আসে নাই, তুই ফিরে আয়।।

মিছিলে মিছিলে মুক্তির ছলে হারালাম দাদা আর পিতাকে।
আমরা দুই ভাই লড়াই করলাম, আনতে স্বাধীনতাকে।
আমরা ভাবলামÑ যদি পাই সুষ্ঠ গণতন্ত্র ও অধিকার,
তাহলেই স্বাধীনতা হবে জনতার, আমরা পাব সুবিচার।
আমাদের বুকে গুলি করে যেসব গুÐা, পুলিশ আর সেনা,
তারা আমাদের লোক না, তাদের প্রতিরোধেই করলাম হানা।
সেই যুদ্ধেই আমার ভাইয়ের প্রাণ যায়, আর আমার ঠ্যাং যায়।
স্বাধীনতায় প্রাণ তো দিলাম কত, তুই কেন দিবি তায়?

লাখ শহিদের তালিকায় আমার ভাইয়ের নামটা নাই!
তুই বললিÑ “দাদাভাই, শহিদের তালিকাই তো নাই!
আর শহিদের তালিকার দরকারটা কি আসলেই আছে?
মানুষ থেকে মানুষকে বেছে বেছে আলাদা করলে পাছে,
সাম্যের আদর্শে মুক্তির সংগ্রামটাই হয়ে যায় বরবাদ;
পড়ে দেখো উদারতাবাদ, মার্কসবাদ আর স্বাধীনতাবাদ।”
তুই বলতিÑ “মুক্তির মানে শেখার আগে বোকারা যুদ্ধে যায়।”
আজ মিছিলে গেছিলি কেন? তুইও কি বোকা হায়? বল, আয়।।

ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচার লুটছে জনতার মুক্তি ও অধিকার।
তুই বলতিÑ “এখন কোনো ধ্বংসাত্মক সংগ্রাম চাই না আর।
আমি বড় হয়ে শিক্ষক হবো, ফ্যাসিস্টের সন্তানকে পড়াবো,
আমার মুক্তি-হত্যার বেদনার সুর তার কানে ঢেলে দেবো।
আম-জনতাকে শেখাবোÑ ম্যাপ ও পতাকাই নয় স্বাধীনতা,
স্বাধীনতা মানে জনতার স্বাধীনতা, অধিকার ও সমতা।”
তুই-ই তো হারিয়ে গেলি ভাই, মুক্তির মানে আজ কে শেখায়?
জনতাকে আজ পথ কে দেখায়? দাদুভাই, তুই চলে আয়।।

স্বাধীনতার বহুমত, বহুপথ, বহু তত্ত¡কথার শেষে,
তুই বলতি হেসেÑ “স্বতন্ত্র আলাদা পথ লাগবে বাংলাদেশে।
ডানপন্থী স্বাধীনতাবাদে বাতলানো সম্পূর্ণ মুক্তবাজারে,
ব্যবসায়ী-গুÐারা সিন্ডিকেট গড়ে জনতার পকেট মারে!
ধর্মপ্রাণ বাংলাদেশি সন্তান মানবে বামধারার মত,
বাংলাদেশকে খুঁজে পেতে হবে নিজস্ব মুক্তির স্বকীয় পথ।”
পথহারা পথিকেরা পথচেয়ে বসে আছে তোর অপেক্ষায়,
সেই স্বকীয় নিজস্ব পথ প্রস্তুত করতে তুই চলে আয়।।

তোর অভুক্ত জননী ভাত বেড়ে বসে আছে তোর অপেক্ষায়,
সংগ্রামে প্রাণ হারানো পূর্বপুরুষেরাও তোর পথপানে চায়,
স্বৈরাচারের আওতায় পরাধীন জনতা পথ পেতে চায়,
তোর বৃদ্ধ বিকলাঙ্গ দাদা পথচেয়ে বসে আছে তোর আশায়।।

এতো জনম ধরে মুক্তির তরে আমরা দিলাম যত প্রাণ,
সে বেদনা হতে মুক্তি পেতে আমিও চললাম দিতে প্রাণদান।
তোদের মিছিলে আমার লাশের মিশেলে ঝড় তোল বাংলায়,
নিজেরে খুন করে মুক্ত বাংলায় তোর দাদু তোর মুক্তি চায়।।

রচনাকাল: ১৮ জুলাই ২০২৪
উৎস:

 

 

সাহিত্যশৈলী: কবিতাটি একই সঙ্গে একটি একক নাটকীয় স্বগোতক্তি (ফৎধসধঃরপ সড়হড়ষড়মঁব) ও গীতিকবিতা (নধষষধফ)। ১০ স্তবকের এই কবিতাটির প্রতি পঙক্তি গঠিত হয়েছে অক্ষরবৃত্ত ছন্দের হিসেবে ২২টি করে মাত্রার দ্বারা। তবে, সবগুলো স্তবকের পঙক্তিসংখ্যা সমান নয়। প্রথম ২টি এবং শেষ ২টি স্তবকে পঙক্তি রয়েছে ৪টি করে। মাঝের ৬টি স্তবকে পঙক্তি রয়েছে ৮টি করে। মাত্রাসাম্য ও অন্তমিলের সুষম মিশেলে গড়া এই কবিতাটার স্তবকগুলো অসমান কেন? সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে একটু কবিতাটার ভাবের দিকে তাকাই। কবিতায় দাদার স্বগোতক্তির মাঝেই বিভিন্ ব্যক্তির উক্তি এনে ব্যাখ্যা করা হয়েছেÑ কী করে উদারতাবাদ, মার্কসবাদ, স্বাধীনতাবাদÑ তিনটিরই শাখা-প্রশাখাগুলো মানুষকে মুক্তি দিতে চায়। সকলের লক্ষ্য এক তবে, পথ আলাদা। আলাদাপথের আলাদা টানে সমাজ ছুটে চলেছে ভবিষ্যতের পানে হেলে-দুলে এক অনিশ্চিত অবারিত অসীমের কোলে, এতো এতো অমিলের মিলে সুললিত এক ছন্দের তালে এই কবিতার মতোন।

টীকা ভাষ্য
(ক) স্বাধীনতাবাদ (খরনবৎঃধৎরধহরংস)
স্বাধীনতাবাদ একটি রাজনৈতিক দর্শন। উদারতাবাদী দর্শনের স্বাধীনতার (ষরনবৎঃু) ধারণা এবং মার্কসবাদী দর্শনের নৈরাজ্যবাদের (ধহধৎপযরংস) ধারণার সমন্বয় হতে স্বাধীনতাবাদ ধারণাটি বিকশিত হয়েছে। স্বাধীনতাবাদী দর্শনের মূল কথা হলোÑ মানুষ জন্মেছে স্বাধীনভাবে এবং মানুষকে স্বাধীনভাবেই জীবন কাটাতে দিতে হবে। এইজন্য মানুষকে সর্বোচ্চ পরিমাণে নাগরিক স্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকারগুলো ‘সমতার নীতি’ অনুযায়ী দিতে হবে। মুক্তচিন্তা, বাক-স্বাধীনতা, বাছাই করার স্বাধীনতা ও আইনের শাসন স্বাধীনতাবাদীদের প্রধান দাবি। নাগরিক জীবনে সরকারের হস্তক্ষেপ ও কর্তৃত্ববাদের বিরোধিতাও স্বাধীনতাবাদের মুখ্য দাবি। স্বাধীনতাবাদীদের মূল্য লক্ষ্য জনগণের মানুষের ব্যক্তি-স্বাধীনতা হলেও ডানপন্থী ও বামপন্থী স্বাধীনতাবাদীগণ দুইটি আলাদাপথে স্বাধীনতা অর্জনের পথ বাতলে দেন।
আরো বুঝতে পড়–ন:
১. ঋৎরবফসধহ, গরষঃড়হ. ঈধঢ়রঃধষরংস ধহফ ঋৎববফড়স. ঈযরপধমড়: টহরাবৎংরঃু ড়ভ ঈযরপধমড় চৎবংং, ১৯৬২.
২. ঐধুবশ, ঋৎরবফৎরপয অ. ঞযব জড়ধফ ঃড় ঝবৎভফড়স. ঈযরপধমড়: টহরাবৎংরঃু ড়ভ ঈযরপধমড় চৎবংং, ১৯৪৪.
৩. কড়পয, উধারফ ঐ. ঞযব খরনবৎঃধৎরধহ গরহফ: অ গধহরভবংঃড় ভড়ৎ ধ ঋৎবব ঝড়পরবঃু. ঘবি ণড়ৎশ: ঝরসড়হ ্ ঝপযঁংঃবৎ, ২০১৫.
৪. গরংবং, খঁফরিম াড়হ. ঐঁসধহ অপঃরড়হ: অ ঞৎবধঃরংব ড়হ ঊপড়হড়সরপং. অঁনঁৎহ, অখ: খঁফরিম াড়হ গরংবং ওহংঃরঃঁঃব, ১৯৯৮ [১৯৪৯].
৫. গঁৎৎধু, জড়নবৎঃ. খরনবৎঃধৎরধহরংস: অ চড়ষরঃরপধষ চযরষড়ংড়ঢ়যু ভড়ৎ ঞড়সড়ৎৎড়.ি খড়হফড়হ: ঈধঃড় ওহংঃরঃঁঃব, ১৯৯৭.
৬. ঘড়ুরপশ, জড়নবৎঃ. অহধৎপযু, ঝঃধঃব, ধহফ টঃড়ঢ়রধ. ঘবি ণড়ৎশ: ইধংরপ ইড়ড়শং, ১৯৭৪.
৭. ঘড়ুরপশ, জড়নবৎঃ. চযরষড়ংড়ঢ়যরপধষ ঊীঢ়ষধহধঃরড়হং. ঈধসনৎরফমব, গঅ: ঐধৎাধৎফ টহরাবৎংরঃু চৎবংং, ১৯৮১.
৮. জধহফ, অুহ. ঞযব ঋড়ঁহঃধরহযবধফ. ঘবি ণড়ৎশ: ইড়ননং-গবৎৎরষষ, ১৯৪৩.
৯. জড়ঃযনধৎফ, গঁৎৎধু ঘ. গধহ, ঊপড়হড়সু, ধহফ ঝঃধঃব: অ ঞৎবধঃরংব ড়হ ঊপড়হড়সরপ চৎরহপরঢ়ষবং. ২হফ বফ. অঁনঁৎহ, অখ: খঁফরিম াড়হ গরংবং ওহংঃরঃঁঃব, ২০০৯.

(খ) ডানপন্থী স্বাধীনতাবাদ (জরমযঃ-খরনবৎঃধৎরধহরংস): স্বাধীনতাবাদের এই ধারার উদ্ভব হয়েছে উদারতাবাদ হতে। জন লক, থমাস হবস, জ্যাঁ জ্যাক রুশো প্রমুখকে এই দর্শনের আদি-চিন্তক বলা চলে। ধরুন, আপনি হিটলারের আমলের জার্মানির একজন প্রজা। নিজেকে উক্ত পরিস্থিতিতে নিয়ে কল্পনা করুন; সরকার আপনার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। আপনি হিটলারের সামান্য সমালোচনা করে কিছু লিখলেন, আপনাকে ধরে নিয়ে গেল ক্যাম্পে; তারপর নির্যাতন কাকে বলে কতপ্রকার বুঝিয়ে দেবে। কিংবা, ধরুন, সরকার চাইছে আপনাকে যুদ্ধে যেতে হবে সৈনিক হিসেবে, আর আপনি যুদ্ধই চান না। এমতাবস্থায় কেমন লাগবে আপনার? অরুন হিটলারের কোনো আদেশ না শোনায় আপনাকে কারাগারে নিক্ষেপ করল হিটলার, যেই আদেশটি শুনলে জনগণের কোনো উপকার হতো না মনে করে আপনি শোনেননি। এসময় হিটলারের কারাগারে বসে আপনি ভাবছেনÑ আমিও পৃথিবীতে এসেছি একা এক মুক্ত মানব হয়ে, হিটলারও, সে আমাকে বাধ্য করার কে?
এই প্রশ্নটি থেকেই ডানপন্থী স্বাধীনতাবাদের শুরু। ডানপন্থী স্বাধীনতাবাদীরা চায় নাগরিক স্বাধীনতার পূর্ণ বাস্তবায়ন, তারা চায় সরকারের নিয়ন্ত্রণে কোনো সম্পত্তি না থাকুক, সব সম্পত্তি ব্যক্তি-মালিকানাধীন হোক, মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু থাকুক, লেইসেজ ফেয়ার সিস্টেম চালু থাকুক, সরকার কাউকে এক পয়সার ভর্তুতি না দিক, পণ্যের দাম নির্ধারিত হোক বাজারে চাহিদা ও যোগানের ওপর ভিত্তি করেÑ সরকারের দপ্তরে না। অতি ডানপন্থী স্বাধীনতাবাদীরা তো সরকারই চায় না, দেশের সবকিছু ব্যক্তি-মালিকানাধীন এবং ব্যক্তি-নিয়ন্ত্রণাধীন করে পেতে চায়। এই কারণে সরকারি সম্পত্তি বেচে দিয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পক্ষপাতী এরা। সকল কাজে বেসরকারিকরণ চায়।
আরো বুঝতে পড়–ন:
১. করঃংপযবষঃ, ঐবৎনবৎঃ, ধহফ অহঃযড়হু ঔ. গপএধহহ. ঞযব জধফরপধষ জরমযঃ রহ ডবংঃবৎহ ঊঁৎড়ঢ়ব: অ ঈড়সঢ়ধৎধঃরাব অহধষুংরং. অহহ অৎনড়ৎ: টহরাবৎংরঃু ড়ভ গরপযরমধহ চৎবংং, ১৯৯৭ [১৯৯৫], ২৭.
২. গঁফফব, ঈধং, বফ. ঞযব চড়ঢ়ঁষরংঃ জধফরপধষ জরমযঃ: অ জবধফবৎ. খড়হফড়হ: জড়ঁঃষবফমব, ২০১৬. ওঝইঘ ৯৭৮-১১৩৮৬৭৩৮৬১.
৩. ইবারৎ, গধৎশ, বফ. ঊহপুপষড়ঢ়বফরধ ড়ভ চড়ষরঃরপধষ ঞযবড়ৎু. ঞযড়ঁংধহফ ঙধশং, ঈঅ: ঝধমব চঁনষরপধঃরড়হং, ২০১০, ৮১১.
৪. জড়নরহ, ঈড়ৎবু. ঞযব জবধপঃরড়হধৎু গরহফ: ঈড়হংবৎাধঃরংস ভৎড়স ঊফসঁহফ ইঁৎশব ঃড় ঝধৎধয চধষরহ. ঙীভড়ৎফ: ঙীভড়ৎফ টহরাবৎংরঃু চৎবংং, ২০১১, ১৫–১৬. ওঝইঘ ৯৭৮-০১৯৯৭৯৩৭৪৭.
৫. ঐধৎসবষ, জড়নবৎঃ, ধহফ জধপযবষ ক. এরনংড়হ. “জরমযঃ-খরনবৎঃধৎরধহ চধৎঃরবং ধহফ ঃযব ‘ঘবি ঠধষঁবং’: অ জব-বীধসরহধঃরড়হ.” ঝপধহফরহধারধহ চড়ষরঃরপধষ ঝঃঁফরবং ১৮, হড়. ২ (১৯৯৫): ৯৭–১১৮.
৬. গধৎংযধষষ, চবঃবৎ. উবসধহফরহম ঃযব ওসঢ়ড়ংংরনষব: অ ঐরংঃড়ৎু ড়ভ অহধৎপযরংস. খড়হফড়হ: ঐধৎঢ়বৎ চবৎবহহরধষ, ২০০৮. ওঝইঘ ৯৭৮-১৬০৪৮৬০৬৪১.
৭. ঠরহপবহঃ, অহফৎব.ি গড়ফবৎহ চড়ষরঃরপধষ ওফবড়ষড়মরবং. ৩ৎফ বফ. ঐড়নড়শবহ, ঘঔ: ঔড়যহ ডরষবু ্ ঝড়হং, ২০০৯, ৬৬. ওঝইঘ ৯৭৮-১৪৪৪৩১১০৫১.
৮. করঃংপযবষঃ, ঐবৎনবৎঃ, ধহফ অহঃযড়হু ঔ. গপএধহহ. ঞযব জধফরপধষ জরমযঃ রহ ডবংঃবৎহ ঊঁৎড়ঢ়ব: অ ঈড়সঢ়ধৎধঃরাব অহধষুংরং. অহহ অৎনড়ৎ: টহরাবৎংরঃু ড়ভ গরপযরমধহ চৎবংং, ১৯৯৭, ২৭.
৯. গঁফফব, ঈধং. ঞযব চড়ঢ়ঁষরংঃ জধফরপধষ জরমযঃ: অ জবধফবৎ. খড়হফড়হ: জড়ঁঃষবফমব, ২০১৬. ওঝইঘ ৯৭৮-১১৩৮৬৭৩৮৬১.

(গ) বামপন্থী স্বাধীনতাবাদ (খবভঃ-খরনবৎঃধৎরধহরংস): হেগেল, কার্ল মার্কস, ফ্রেডেরিক অ্যাঙ্গেলস প্রমুখ চিন্তকের সাথে জন লক, থমাস হবস , রুশো প্রমুখের চিন্তার একটি সাধারণ বৈশিষ্ট হলোÑ উভয় গ্রæপই মানুষের মুক্তি চায়, অধিকার চায়Ñ তবে উভয় দলের পথ ভিন্ন। এই ভিন্ন দুইপথকে একটা সাধারণ প্লাটফর্মে এনে জোড়া লাগিয়েছেন বাম-পন্ধী স্বাধীনতাবাদীরা। এই দর্শন একইসাথে ব্যক্তি-অধিকার এবং সামাজিক সাম্য উভয়কে উভয়ের পরিপূরক বলে এবং উভয়কেই একসাথে অর্জন করতে চায়। এরা কর্তৃত্ববাদ বিরোধী বাম ধারার রাজনীতির কথা বলে। ডান-পন্ধী স্বাধীনতাবাদীদের মতো তারাও সীমিত সরকার চায়, কিন্তু কিন্তু তাদের বিশেষ দাবি হলোÑ সমতাভিত্তিক সমাজ অর্থাৎ সম্পদের সুষম বন্টন। অর্থাৎ, নাগরিক জীবনে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না সকলকে সমানাধিকার দেবেÑ এইটুকু উভয় পক্ষেরই দাবি। কিন্তু, অর্থনৈতিক ব্যাপারে দুই দলের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। ধরুণ আপনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন দরিদ্র কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিক। আপনি একটা রেস্টুরেন্টে ওয়েটার হিসেবে চাকরি করেন। আপনার যা আয় হয়, তা দিয়ে কোনোমতে টেনে-টুনে সংসার চালান। জিনিসপত্রের দাম বেশি। বাচ্চাদের পড়াশুনা করাতে হয় প্রাইভেট স্কুলে; বেতন অনেক বেশি। আর এদিকে আপনার রেস্টুরেন্টের মালিক একজন বিলিয়নিয়ার। সে তেমন পরিশ্রম না করেই আয়েশী জীবন-যাপন করছে। সারা বিশ্বে ট্যুর করছে। দামী খাবার খাচ্ছে। দামী পোশাক পড়ছে। দামী গাড়িতে চড়ছে। ধরুন, এক ক্লান্ত বিকেলে আপনার মাথায় প্রশ্ন এলোÑ আমিও পৃথিবীতে এসেছি মায়ের পেট থেকে একা, শূন্য হাতে, আমার মালিকও। আমি এতো খেটে মরছি। কিচ্ছুটি উপভোগ করতে পারছি না আর সে! আমার থেকে কম পরিশ্রম করে আমার থেকে এতো বেশি সুযোগ-সুবিধা নিল এটাই কি ন্যায়বিচার?

এই প্রশ্ন থেকেই এসেছি মার্কসবাদ, শোষণতত্ত¡, উদ্বৃত্ত মূল্য তত্ত¡, বিচ্ছিন্নতার তত্ত¡, দ্বা›িদ্বক বস্তুবাদ, ঐতিহাসিক বস্তুবাদ এবং শ্রেণি সংগ্রামের ধারণাগুলি। এইসব ধারণাগুলো থেকে উদ্বুদ্ধ হয়েই বামপন্থী স্বাধীনতাবাদীরা দাবি করেনÑ নাগরিক স্বাধীনতা থাকবে, নাগরিকদের সরকার কোনো ব্যক্তিজীবনে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না, কিন্তু রাষ্ট্রের স¤পত্তিগুলো ব্যক্তি-নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারবে না, বরং সম্পত্তিগুলো সব সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে, সবাই সরকারের কাজ করবে আর সরকার সবাইকে খাওয়াবে। কেউ কেউ আবার দাবি করেন, সরকারই থাকবে না। একেবারে প্রাচীন কালের মুক্ত-মানবের মতো পৃথিবীর সম্পদ যার যতটুকু লাগে, সে ততুটুকু ভোগ করবে, কেউ কাউকে বাঁধা দেবে না, কেউ কারো সম্পদ কেড়ে খাবে না।

আরো বুঝতে পড়–ন:
১. খড়হম, জড়ফবৎরপশ ঞ. “ঞযব জরংব ড়ভ ঝড়পরধষ অহধৎপযরংস.” ওহ ঞযব জড়ঁঃষবফমব ঈড়সঢ়ধহরড়হ ঃড় ঝড়পরধষ ধহফ চড়ষরঃরপধষ চযরষড়ংড়ঢ়যু, বফরঃবফ নু এবৎধষফ ঋ. এধঁং ধহফ ঋৎবফ উ’অমড়ংঃরহড়, ২২৩. খড়হফড়হ: জড়ঁঃষবফমব, ২০১২.
২. জড়ঃযনধৎফ, গঁৎৎধু. ঞযব ইবঃৎধুধষ ড়ভ ঃযব অসবৎরপধহ জরমযঃ. অঁনঁৎহ, অখ: গরংবং ওহংঃরঃঁঃব, ২০০৯ [২০০৭], ৮৩. ওঝইঘ ৯৭৮-১৬১০১৬৫০১৩.
৩. গধৎংযধষষ, চবঃবৎ. উবসধহফরহম ঃযব ওসঢ়ড়ংংরনষব: অ ঐরংঃড়ৎু ড়ভ অহধৎপযরংস. খড়হফড়হ: ঐধৎঢ়বৎ চবৎবহহরধষ, ২০০৯, ৬৪১.
৪. ঈযড়সংশু, ঘড়ধস. জধফরপধষ চৎরড়ৎরঃরবং, বফরঃবফ নু ঈধৎষড়ং চবৎবমৎরহ ঙঃবৎড়. ৩ৎফ বফ. ঙধশষধহফ, ঈঅ: অক চৎবংং, ২০০৩, ২২৭–২২৮. ওঝইঘ ১৯০২৫৯৩৬৯৩.
৫. কুসষরপশধ, ডরষষ. “খরনবৎঃধৎরধহরংস, খবভঃ-.” ওহ ঞযব ঙীভড়ৎফ ঈড়সঢ়ধহরড়হ ঃড় চযরষড়ংড়ঢ়যু, বফরঃবফ নু ঞবফ ঐড়হফবৎরপয, ৫১৬. ঘবি ণড়ৎশ: ঙীভড়ৎফ টহরাবৎংরঃু চৎবংং, ২০০৫. ওঝইঘ ৯৭৮-০১৯৯২৬৪৭৯৭.
৬. এড়ড়ফধিু, উধারফ. অহধৎপযরংঃ ঝববফং ইবহবধঃয ঃযব ঝহড়:ি খবভঃ-খরনবৎঃধৎরধহ ঞযড়ঁমযঃ ধহফ ইৎরঃরংয ডৎরঃবৎং ভৎড়স ডরষষরধস গড়ৎৎরং ঃড় ঈড়ষরহ ডধৎফ. খরাবৎঢ়ড়ড়ষ: খরাবৎঢ়ড়ড়ষ টহরাবৎংরঃু চৎবংং, ২০০৬, ৪.
৭. ঝঢ়রঃু, ঔবধহ-ঋধনরবহ. “খবভঃ-ডরহম খরনবৎঃধৎরধহরংস: ঊয়ঁধষরঃু ইধংবফ ড়হ ঝবষভ-ঙহিবৎংযরঢ়.” জধরংড়হং চড়ষরঃরয়ঁবং ২৩, হড়. ৩ (গধৎপয ২০০৬): ২৩–৪৬. যঃঃঢ়ং://ফড়র.ড়ৎম/১০.৩৯১৭/ৎধর.০২৩.০০২৩.
৮. ঘবসিধহ, ঝধঁষ. ঞযব চড়ষরঃরপং ড়ভ চড়ংঃধহধৎপযরংস. ঊফরহনঁৎময: ঊফরহনঁৎময টহরাবৎংরঃু চৎবংং, ২০১০, ৪৩.
৯. এড়ড়ফধিু, উধারফ. অহধৎপযরংঃ ঝববফং ইবহবধঃয ঃযব ঝহড়:ি খবভঃ-খরনবৎঃধৎরধহ ঞযড়ঁমযঃ ধহফ ইৎরঃরংয ডৎরঃবৎং ভৎড়স ডরষষরধস গড়ৎৎরং ঃড় ঈড়ষরহ ডধৎফ. খরাবৎঢ়ড়ড়ষ: খরাবৎঢ়ড়ড়ষ টহরাবৎংরঃু চৎবংং, ২০০৬, ৪.
(গ) সমাজতন্ত্রী স্বাধীনতাবাদ (ঝড়পরধষ-খরনবৎঃধৎরধহরংস):
বামপন্থী স্বাধীনতাবাদ ও ডানপন্থী স্বাধীনতাবাদের কোনোটিই সমাজে পুরোপুরি অস্তিত্বশীল নয়। সমাজে বিরাজ করে এ দুইয়ের মাঝামাঝি আর দুইপক্ষেই যার যার দিকে সমাজকে টানার চেষ্টা করে। আর, স্বাধীনতাবাদের এই দুই ধারার মধ্যপন্থী একটি মতবাদ হলো সমাজতন্ত্রী স্বাধীনতাবাদ। মানুষকে স্বাধীনতা দেওয়ার জন্য তাদের বাতলানো পদ্ধতি হলোÑ রাষ্ট্রে একটা সরকার থাকবে, সরকার কর্তৃত্ববাদীও হবে না, পুঁজিবাদীও হবে না, নখদর্পহীন সীমিত সরকারও হবে না; সরকারের আসল কাজ হবেÑ জনগণের ব্যবস্থাপনা; জনগণ সমবায় সমিতি গঠন করবে। কোনো ব্যক্তিগত সম্পত্তি থাকবে না। সম্পত্তির মালিক হবে সমবায় সমিতি। যার যার যোগ্যতা, বাসস্থান ও কর্মক্ষমতা অনুযায়ী একেকজন একেক ধরণের সমিতিতে যুক্ত হবে। যার যার যোগ্যতা অনুযায়ী একেকজন একেক কাজ করবে। আর সমিতি তার সদস্যদেরকে খাওয়াবে পড়াবে। রাষ্ট্রের কাজ হবে এই সমিতিগুলোর কার্যক্রম সমন্বয় এবং ব্যবস্থাপনা। রাষ্ট্র সমিতিগুলোর কিংবা মানুষের অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিজীবনে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। আর সমিতির মধ্যেও কেউ কারোর অধীনে কাজ করবে না। কেউ কারো খবরদারি শুনবে না। সবার সম্পত্তি ও মর্যাদা সমান থাকবে। সবকিছুর সুষম বন্টন হবে।

আরো বুঝতে পড়–ন:
১. অংরসধশড়ঢ়ড়ঁষড়ং, ঔড়যহ. “অ জধফরপধষ চৎড়ঢ়ড়ংধষ ভড়ৎ উরৎবপঃ উবসড়পৎধপু রহ খধৎমব ঝড়পরবঃরবং.” ইৎধুরষরধহ ঔড়ঁৎহধষ ড়ভ চড়ষরঃরপধষ ঊপড়হড়সু ৩৬, হড়. ২ (অঢ়ৎরষ–ঔঁহব ২০১৬): ৪৩০–৪৪৭. যঃঃঢ়ং://ফড়র.ড়ৎম/১০.১৫৯০/০১০১-৩১৫৭২০১৬া৩৬হ০২ধ১০.
২. ঋৎèৎব, ইৎঁহড়, ধহফ ঔঁষরধহব জবরহবপশব. “অ খরনবৎঃধৎরধহ ঝড়পরধষরংঃ জবংঢ়ড়হংব ঃড় ঃযব ‘ইরম ঝড়পরবঃু’: ঞযব ঝড়ষরফধৎরঃু ঊপড়হড়সু.” ওহ ঞযব ঞযরৎফ ঝবপঃড়ৎ, বফরঃবফ নু জরপযধৎফ ঐঁষষ, ঔধহব এরননড়হ, ঙধহধ ইৎধহুবর, ধহফ ঐবষবহ ঐধঁময, ১২৫–১২৬. টক: ঊসবৎধষফ এৎড়ঁঢ় চঁনষরংযরহম, ২০১১. যঃঃঢ়ং://ফড়র.ড়ৎম/১০.১১০৮/ঝ২০৪৬-৬০৭২(২০১১)০০০০০০১০১৫.
৩. ওহঃৎড়ঢ়র, চরবঃৎড়. “জবপরঢ়ৎড়পধষ খরনবৎঃধৎরধহরংস.” ঊঁৎড়ঢ়বধহ ঔড়ঁৎহধষ ড়ভ চড়ষরঃরপধষ ঞযবড়ৎু ২৩, হড়. ১ (ঔঁহব ১, ২০২২): ২৩–৪৩. যঃঃঢ়ং://ফড়র.ড়ৎম/১০.১১৭৭/১৪৭৪৮৮৫১২২১০৯৯৬৫৯.
৪. চরহঃধ, ঝধশঁ, ধহফ উধারফ ইবৎৎু. “ঞড়ধিৎফং ধ খরনবৎঃধৎরধহ ঝড়পরধষরংস ভড়ৎ ঃযব ঞবিহঃু-ঋরৎংঃ ঈবহঃঁৎু?” ওহ খরনবৎঃধৎরধহ ঝড়পরধষরংস: চড়ষরঃরপং রহ ইষধপশ ধহফ জবফ, বফরঃবফ নু অষবী চৎরপযধৎফ, জঁঃয করহহধ, ঝধশঁ চরহঃধ, ধহফ উধাব ইবৎৎু, ২৯৪–৩০৩. ইধংরহমংঃড়শব: চধষমৎধাব গধপসরষষধহ, ২০১২.

author

রাজা আবুল কালাম আজাদ

Raja Abul Kalam Azad is a post-modern researcher, writer, journalist, environmental activist, and teacher. He completed his bachelor's and master's degrees in disaster management at the University of Dhaka. His various research articles have been published in reputed international journals. Currently, he is working as a teacher at a government school and serving as the coordinator of the Disaster Economics Unit of Disaster Perception, a Dhaka-based organization. He is the President of the Initiatives for Bangladesh Reform Research (IBRR), Member Secretary of Bangladesh Sangskritik Andolon, and Secretary General of 'Muktatma Samiti' and one of the Members of the Independent Bangla Editorial Board.

এই ধরণের আরো...

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial