রাসেল‘স ভাইপার ! বাংলাদেশে মানুষের এক নতুন আতঙ্ক। দীর্ঘ কয়েক কয়েক দশক পর সম্প্রতি এই বিষধর প্রজাতির প্রাদুর্ভাব আবার বেড়ে যাওয়ায় জনমনে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
রাসেল‘স ভাইপার বাংলাদেশে এটি চন্দ্রবোড়া নামেই বেশ পরিচিত। এই সাপের বিচরণ দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি। ভারতে সাপের কামড়ে যত মানুষ মারা যায় তার ৩০-৪০% এককভাবে রাসেল ভাইপারের কামড়ে মারা যায়। ধারণা করা হচ্ছে পদ্মা নদী হয়ে ভারত থেকেই সাপটি এসেছে বাংলাদেশে।
ম্যাপ বিশ্লেষণ করেও দেখা যায়, রাসেল‘স ভাইপার বাংলাদেশের যেসব জেলায় নতুন করে দেখা যাচ্ছে, তার প্রায় সবই পদ্মা নদী ও তার পরবর্তী ধারা নিম্ন-মেঘনার অববাহিকায় অবস্থিত।
পৃথিবীর অন্যতম বিষধর সাপ রাসেল‘স ভাইপার ! অনেকেই মনে করেন, বিশ্বে যত সাপ আছে তার মধ্যে ছোবল মারার দিক থেকে এটিই সবচেয়ে দ্রুতগতির। এক সেকেন্ডের ষোল ভাগের এক ভাগ সময়ে ছোবল মারতে পারে এটা। এটা এতোটাই বিষাক্ত যে তাৎক্ষণিক মৃত্যু ছাড়াও এর বিষে শরীরের মাংস পচে গিয়ে বা রক্ত জমাট বেঁধে মানুষের মৃত্যু হয়। এমনকি অঙ্গহানিও হয়।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হচ্ছে, অন্য সাপ যখন মানুষের উপস্থিতি বা পায়ের শব্দে পালিয়ে যায়, রাসেল ভাইপার সেখানে পালিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে বরং আক্রমনাত্মক হয়ে ছুটে আসে এবং চোখের পলকে ছোবল বসায়।
১৯৮২ সালে এই সাপটি বাংলাদেশে প্রথম সনাক্ত করা হয়। তবে বেশ অনেক বছর এটা দেশে দেখা না গেলেও এখন এর উপস্থিতি বেশ লক্ষ্যণীয়। বিশেষ করে পদ্মা নদীর আশেপাশের এলাকায়। অনেকের মতে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে পাহাড়ি ঢলের মাধ্যমে দেশে এই সাপের আগমন। তবে এই সাপ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পরার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তন তথা সাম্প্রতিক দাবদাহকেও কিছুটা দায়ী করেন বিশেষজ্ঞরা।
উল্লেখ্য – এবছর মানিকগঞ্জ, পাবনা, নাটর, রাজশাহী, দোহার, মুন্সিগঞ্জ, পটুয়াখালী, ভোলা, এমনকি ঢাকাসহ দেশের প্রায় ২৭ টির মতো জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে এই বিষধর সাপটি।যা দেশের জনমনে বেশ ভীতির সঞ্চার ঘটিয়েছে। দেশের অর্থনীতির উপরেও পড়তে পারে এর নেতিবাচক প্রভাব। কেননা এই সাপের বিচরণ ফসলি জমিতে সবচেয়ে বেশি। মূলত ফসলি জমিতে থাকা ইঁদুর এদের প্রিয় খাবার। আর সেই খাবারের সন্ধানে তারা সেখানে বেশি বিচরণ করে। তবে বর্ষাকালে এরা প্রায়শই মানুষের বসতভিটায় চলে আসে। যা দেশের গ্রাম অঞ্চলের জন্য বেশ উদ্বেগের কারণ।
তাই এখুনি সময় এ বিষয়ে সরকারি তরফ থেকে স্পষ্ট নির্দেশনা, সঠিক তথ্য সরবরাহ , সচেতনতা বৃদ্ধি, নিয়মিত বিবৃতি এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার।অন্যথায় এটি মানুষের প্রাণহানি থেকে শুরু করে দেশের সামগ্রিক কৃষিক্ষেত্রের জন্য ভয়াবহ ক্ষতি ডেকে আনবে।
কিছু করণীয়:
★সাপের কামড়ে যদি দাঁত বসে যায়, তাহলে ক্ষতস্থানের ওই জায়গাটিসহ ওপর-নিচের খানিকটা জায়গা নিয়ে হালকা করে ব্যান্ডেজ দিয়ে পেঁচিয়ে দিতে হবে। নড়াচড়া করা যাবে না। রোগীকে সাহস দিতে হবে। হাঁটা-চলাচল একেবারেই বন্ধ করে দিতে হবে। যাতে রক্ত চলাচলটা একটু কম হয়। এভাবে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে যাতে করে দ্রুত এন্টি ভেনম দেওয়া যায়।
★ বাড়ির আশপাশে ঝোপঝাড় থাকলে তা কেটে পরিষ্কার রাখতে হবে
★বাসার মেঝে মাটির হলে সেখানে থাকা গর্ত ভরাট করতে হবে
★ ফসলি জমিতে কৃষকদের কিছুটা বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে
★ অন্ধকারে পথ চলার সময় সাথে আলোর ব্যবস্থা রাখতে হবে