সম্প্রতি বাংলাদেশের সরকারি চাকুরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে হাইকোর্ট ডিভিশনের এক রায়কে কেন্দ্র করে মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাদানুবাদ চলছে। মুক্তিযোদ্ধা কোটার পক্ষে ও বিপক্ষে চলছে নানারকম যুক্তি প্রদর্শন। চলুন, আমরা নির্মোহ মন নিয়ে বুঝে দেখি, আমাদের কার যুক্তি কতটুকু ঠিক। মুক্তিযুদ্ধের যেই চেতনার মাধ্যমে আমাদের রাষ্ট্রের জন্ম হলো, সেই চেতনা কীভাবে আমাদের সংবিধানের মৌলিক কাঠামো তৈরি করল, তা একটু বুঝে দেখি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর সংবিধান আমাদেরকে কেন, কতটা ও কেমন ধরণের কোটাব্যবস্থা অনুমোদন করে, এবং কেমন ধরণের কোটাব্যবস্থা অনুমোদন করে না, সেসব আমরা আত্ম-বিশ্লেষণের মাধ্যমে বুঝে দেখবো।
কিছু বিষয়ের সংজ্ঞার্থ আমি যথাযথ উৎস থেকে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটসহ বিশ্লেষণ করে দিচ্ছি। আমার বিশ্লেষণে কোনো ধারণাগত বিষয়ের কোনোকিছু বুঝতে অসুবিধা হলে, এই রচনার শেষে প্রদত্ত গ্রন্থপঞ্জী হতে পড়াশুনা করে নিতে পারেন। তবে, এই রচনার মূল বক্তব্যটি বুঝতে আপনাকে খুব বেশি কিছু পড়তে হবে না; আমি যে প্রশ্নগুলো করেছি সেই প্রশ্নগুলো আপনি আপনার বিবেককে করলেই উত্তর পেয়ে যাবেন, আশা করি।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কী?
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একটি সুন্দর সংজ্ঞা রয়েছে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩’-এর ২ ধারায়: ‘‘জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতার সেই সকল আদর্শ যাহা আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহিদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল ।’’
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিশদ ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপপেখা ২০২১-এ। এখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত চেতনা (সাম্য, মানবিক মর্জাদাবোধ ও সামাজিক ন্যায়বিচার) এবং রাষ্ট্রীয় ৪ মূলনীতিকে (জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা) বোঝানো হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জন্ম হলো কীভাবে?
বিষয়টিকে পরিষ্কার করার জন্য আমি একটি প্রশ্ন করি:
প্রশ্ন ১: ১৯৪৬ সালে পূর্ব বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলিম লীগকে ভোট দেয়। সেসময়, মুসলিম লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ছিল পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা। পরে, মুসলমান ও তফসিলি হিন্দু সম্প্রদায়ের একাংশ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অংশ নেয়। এমনকি স্বাধীন বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও সেসময় পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে জোড়ালো ভূমিকা পালন করেন (তথ্যসূত্র: অসমাপ্ত আত্মজীবনী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান)। সেই একই বাঙালি জাতি কেন, কোন কারণে, কীসের অভাবে সেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিলেন যে পাকিস্তান তারা নিজেরাই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?
প্রশ্নটির উত্তর নিয়ে আপনারা ভাবুন। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে মনে হয়: রাষ্ট্রে ও সমাজে যেই উপাদানগুলোর অভাববোধের কারণে এবং যেই উপাদানগুলো রাষ্ট্রে ও সমাজে প্রতিষ্ঠা করার তাগিদে মুক্তিযোদ্ধাগণ নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, সেই উপাদানগুলোই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল স্বাধীনতার ইশতেহারে ঘোষণা করা হয়, ‘‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার’’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই ৩টি উদ্দেশ্য অর্জন তাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের কারণ হিসেবে অভিহিত হতে থাকে। সেসময় মুক্তিযোদ্ধাদেরকে মুক্তিযুদ্ধে কেন যোগ দিয়েছে সেই প্রশ্ন করা হলে, এই ৩টি কারণই তাই জবাবে বলতেন জাতীয় বীরেরা।
প্রশ্ন ২: ‘‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার’’কে কেন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করা হলো?
কয়েকটি পরিসংখ্যান খেয়াল করলে এই প্রশ্নটির জবাব পাওয়া যাবে। ১৯৫১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী অবিভক্ত পাকিস্তানের জনসংখ্যায় বাঙালি ছিল প্রায় ৫৬%। ১৯৫৬-১৯৭১ সাল পর্যন্ত সময়ে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারে:
- মন্ত্রীদের মধ্যে বাঙালি: ৪২% (প্রায়)
- বেসামরিক চাকরিতে বাঙালি: ১৬% (প্রায়)
- সামরিক চাকরিতে বাঙালি: ৩.৮৫% (প্রায়)
এবং, ১৯৫০-১৯৭০ সাল পর্যন্ত সময়ে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ ছিল মোট জাতীয় বরাদ্দের মাত্র ২৮.৮৪%।
পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যার তুলনায় বরাদ্দ কম হওয়ায়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য উন্নয়নের সূচকে মাথাপিছু সরকারি ব্যয় কম ছিল। ফলে, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রায় প্রতিটি সূচকে পিছিয়ে পড়ছিল বাঙালি।
সুতরাং, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাঙালি জাতির ক্ষোভের প্রধান কারণ ছিল এই বৈষম্য, যা ছিল একই সঙ্গে সামজিক অবিচারও বটে।
একই রাষ্ট্রকাঠামোতে নাগরিকদের একাংশকে অগ্রসর হতে দেওয়া আরেক অংশকে অনগ্রসর করে রাখার ফলে যে ঔপনিবেশিক শোষণযন্ত্র তৈরি হয়েছিল, তাতে বাঙালি জাতিকে অমর্যাদাকর জীবন-যাপণে বাধ্য করা হচ্ছিল নানারকম রাজনৈতিক-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রক্রিয়ায়।
তাইতো, বৈষম্যকে দূর করতে ‘সাম্য’, সামাজিক কাঠামোর মাধ্যমে সৃষ্ট অবিচার রুখতে ‘সামাজিক সুবিচার’ আর সকল নাগরিকের সমমর্যাদা নিশ্চিত করতে তাই ‘মানবিক মর্যাদা’ নিশ্চিত করাকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করা হয়।
আমি কি ঠিক বুঝেছি? আমার বোঝায় কি কোনো ঘাটতি আছে? ঘাটতি থাকলে লেখার মাধ্যমেই বুঝিয়ে দিন আমাকে। কলমের জবাব কলম দিয়ে দিন; যুক্তির জবাব যুক্তি দিয়ে দিন; গালি দিয়ে নয়, হিংসা দিয়ে নয়।
প্রশ্ন ২: ‘‘জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতা’ কেন আমাদের জাতীয় অস্তিত্বের মূলনীতি হলো?
বাঙালি জাতির প্রতি এই বৈষম্য, অবিচার আর অমর্যাদার কারণ ছিল মোটা দাগে ৪টি:
(১) পশ্চিম পাকিস্তানি নেতৃবৃন্দ কর্তৃক বাঙালি জাতিকে খাটো করে দেখার প্রবণতা।
(২) পুঁজিবাদী নীতি, যার কারণে জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নের চেয়ে পুঁজিপতিদের শিল্পোন্নয়নকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হত। পুঁজিপতিরা ছিল বেশির ভাগ পশ্চিম পাকিস্তানি, তাই তখন দরিদ্র ভোক্তা থেকে পুঁজির প্রবাহ শিল্পপতিদের পকেটে যাওয়ার নামান্তরই ছিল পূর্ব পাকিস্তান থেকে পুঁজি পশ্চিম পাকিস্তানে চালান হওয়া।
(৩) গণতন্ত্রহীনতা: গণতন্ত্র না থাকার কারণেই পাকিস্তানের সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠীকে শোষণ করার সুযোগ পেয়েছে পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক-ব্যবসায়ী যৌথ স্বার্থগোষ্ঠী। গণতন্ত্র না থাকার কারণেই শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সরকারি চাকুরি প্রভৃতি সূচকে বাঙালি জাতিকে বৈষম্যের শিকার হতে হয়।
(৪) সংখ্যালঘুদের প্রতি অবিচার: বাঙালি জাতির প্রতি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অবিচারের আরেকটি রূপ ছিল সংখ্যালঘু, বিশেষ করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি অবিচার। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালি হিন্দুদের কণ্ঠকে ‘হিন্দু’ ও ‘ভারতীয়’ বলে অবদমনের চেষ্টা করতো। ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে নিরীহ বাঙালি হিন্দুদের একটা বড় অংশকে গণহত্যার শিকার হতে হয়।
সুতরাং, বলা চলে পাকিস্তানি শাসনব্যবস্থায় বৈষম্য, শোষণ ও অবিচারের যেসমস্ত মূল কারণ ছিল, সেগুলোর মূলোৎপাটন করার লক্ষ্যেই ‘‘জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্ম নিরপেক্ষতা’’কে আমাদের রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়।
সংবিধানে কীভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অঙ্গিভূত হলো
যেসব আদর্শ ও চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমাদের বীর জনগণ জাতীয় মুক্তির সংগ্রামে আত্ননিয়োগ করেছিল, সেইসব আদর্শ ও চেতনা বাস্তবায়ন করাই ছিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের দায়িত্ব। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের প্রস্তাবনায় সেইসব আদর্শকেই সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে গৃহীত হয়।
প্রস্তাবনায় সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশর সংবিধানে অন্তুর্ভুক্ত করার মানসে তাই সংবিধানের ৮ম অনুচ্ছেদে জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা এবং এই নীতিসমূহ হতে উদ্ভূত সংবিধানের ২য় ভাগে (৮-২৫ অনুচ্ছেদ) বর্ণিত নীতিসমূহকে রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারকে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের-
- ১০ অনুচ্ছেদে মানুষের উপর মানুষের শোষণ হইতে মুক্ত ন্যায়ানুগ ও সাম্যবাদী সমাজলাভ,
- ১১ অনুচ্ছেদে গণতন্ত্র, মৌলিক মানবাধিকার, মানবসত্তার মর্যাদা,
- ১৯ অনুচ্ছেদে সকল নাগরিকের সুযোগের সমতা, মানুষে মানুষে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য বিলোপের উদ্দেশ্যে সুষম সুযোগ-সুবিধাদান
এসব বিষয়কে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি হিসেবে অন্তুর্ভুক্ত করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ব্যাপক প্রয়োগ ঘটানো হয়েছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের তৃতীয় ভাগে জনগণকে মৌলিক অধিকার প্রদানের বেলায়।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের-
- ২৭ অনুচ্ছেদে সকল নাগরিককে আইনের দৃষ্টিতে সমতা
- ২৮ অনুচ্ছেদে ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোন নাগরিককে বৈষম্য প্রদর্শন না করা
- ২৯ অনুচ্ছেদে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের সুযোগের সমতা
- ৪১ অনুচ্ছেদে ধর্মীয় স্বাধীনতা
প্রভৃতি অধিকার প্রদানের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাস্তবায়ন করাকে জনগণের অধিকারে রূপান্তরিত করা হয়।
সরকারি চাকুরিতে কোটা: কারণ ও ধরণ
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৯ অনুচ্ছেদের স্পষ্ট নির্দেশনা: বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অন্যতম মূলনীতি সুযোগের সমতা, এবং ২৯ অনুচ্ছেদের নির্দেশনা: প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকবে; এবং, ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারীপুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কারো প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাবে না।
তবে, ২৯ অনুচেছদেরই ৩ দফায় রাষ্ট্রকে ৩টি সুনির্দিষ্ট কারণে কোটা ব্যবস্থা প্রণয়নের অনুমতি দেওয়া হয়েছে (উল্লেখ্য, এই অনুচ্ছেদ কোটাব্যবস্থা প্রণয়নে রাষ্ট্রকে বাধ্য করে না।)।
২৯(৩)(ক) উপদফা মতে ‘‘নাগরিকদের যে কোন অনগ্রসর অংশ যাহাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করতে পারে” সেই উদ্দেশ্যে কোটা প্রণয়ন করার অনুমতি রাষ্ট্রের আছে।
এই উপদফা অনুযায়ী কেউ কোটা পেতে হলে তাকে অন্তত ২টি শর্ত পূরণ করতে হবে:
শর্ত ১: মাথাপিছু আয়, গড় খাদ্য ক্যালরি গ্রহণ বা উন্নয়নের অন্যান্য সূচক অনুযায়ী ‘অনগ্রসর’ প্রমাণিত হতে হবে।
শর্ত ২: এই অনগ্রসরতার কারণে উপরিউক্ত গোষ্ঠী প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব করতে পারছে না বলে প্রমাণিত হতে হবে/ তা বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে।
এই দুইটি শর্ত বিবেচনায় প্রতিবন্ধী, পিছিয়ে পড়া কিছু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, প্রভৃতি গোষ্ঠী কোটাসুবিধা পেতে পারে বলেই আমার ধারণা।
প্রশ্ন ৩: সংবিধানের ১৯ সুযোগের সমতাকে রাষ্ট্রীয় নীতি এবং ২৮ও ২৯ অনুচ্ছেদে সুযোগের সমতাকে জনগণের অধিকার হিসেবে বর্ণিত হলো। আবার, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ‘সাম্য’। এমতাবস্থায়, অনগ্রসর নাগরিককে কোটা সুবিধা দেওয়া হলে সেটা অন্যান্য নাগরিকের নিকট ‘বৈষম্য’ নয় কি? এবং সেটা কি অন্যান্য নাগরিকের ‘সুযোগের সমতা’র অধিকার বিনষ্ট করে?
প্রশ্নটির উত্তর নিয়ে, আপনার ভাবুন। আমার ধারণা, অনগ্রসর নাগরিকগণ যে তাদের জনসংখ্যার অনুপাতে সমান প্রতিনিধিত্ব লাভ করতে পারে, সেজন্য তাদের সুযোগের সমতার নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই কোটাব্যবস্থার অবতারণা, কাউকে তাদের জনসংখ্যার অনুপাতের চেয়ে বেশি সুবিধা দেওয়া হলে সেটা অবশ্যই সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী হবে।
২৯(৩)(খ) উপদফা অনুযায়ী ধর্মীয় কারণে ধর্মীয়/ উপসম্প্রদায়গত কিছু পদে সংশ্লিষ্ট ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে কিছু পদ সংরক্ষণ করা যাবে।
২৯(৩)(গ) উপদফা অনুযায়ী যেই কর্ম নারীর জন্য অনুপযোগী তা পুরুষের জন্য এবং যেই কর্ম পুরুষের জন্য অনুপযোগী তা নারীর জন্য সংরক্ষণ করা যাবে।
সরকারি চাকুরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা: কারণ ও যৌক্তিকতা
মহান মুক্তিযুদ্ধে অনেক মুক্তিযোদ্ধা আহত হন; অনেকের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়; অনেকে শাহাদাৎ বরণ করেন। এ কারণে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলো অন্যান্য পরিবার হতে কিছুটা ‘অনগ্রসর’ হয়ে গিয়েছিল ধরে নেওয়া যায়। এবং ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের অব্যাহতি পরে সরকারি চাকুরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিনিধিত্বও তাদের জনসংখ্যার তুলনায় কম ছিল। এমতাবস্থায়, তাদেরকে সেসময় কোটাসুবিধা প্রদান করা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ২৯(৩)(ক) উপদফা অনুযায়ী আইনসিদ্ধ ও যৌক্তিক বলেই- আমার ধারণা।
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি নাতনীদের কোটা: কারণ ও যৌক্তিকতা
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ২৮ এবং ২৯ অনুচ্ছেদ ব্যতীত আর কোনো অনুচ্ছেদে কোনো প্রকার কোটাসুবিধা দেওয়ার বিধান আছে কি না, আমার জানা নাই।
সংবিধানের ২৯(৩)(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ীই মুক্তিযোদ্ধা, তাদের সন্তান ও নাতি-নাতনীগণকে নানা পর্যায়ে কোটাসুবিধার আওতায় আনা হয়।
অতএব, তাদের কোটাসুবিধার যৌক্তিকতা বর্তমানে আছে কি না, সেটা ২৯ অনুচ্ছেদের আলোকেই যাঁচাই করা যায়।
প্রশ্ন ৪: বর্তমানে মাথাপিছু আয়, মাথাপিছু খাদ্য ক্যালরিগ্রহণ বা আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অন্য কোনো সূচক অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলো কি দেশের সাধারণ জনগণ থেকে এখনও অনগ্রসর রয়েই গেছে?
প্রশ্ন ৫: বর্তমানে সরকারি চাকুরিতে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের অংশগ্রহণের হার কি জাতীয় গড়ের চেয়ে কম? কম হলে কত কম? উক্ত ঘাটতি নিরসনে কতদিন পর্যন্ত কত শতাংশ হারে কোটা প্রদান করা প্রয়োজন?
৪ এবং ৫ নম্বর প্রশ্নের পরিসংখ্যানগত উত্তর আমার নিকট নেই। তবে, এই প্রশ্নের উত্তর সরকারের নিকট থাকা উচিৎ এবং সেটা প্রকাশও করা উচিৎ। এই প্রশ্নদ্বয়ের উত্তরের ভিত্তিতেই সরকারকে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ: সরকারি চাকুরিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানগণকে কত দিন পর্যন্ত কত শতাংশ হারে কোটাসুবিধা দিলে তারা জাতীয় গড়ের সমান প্রতিনিধিত্ব লাভ করতে পারবে।
মুক্তিযোদ্ধা কোটা সুবিধার অপব্যবহার কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী?
মনে রাখতে হবে, সরকারি চাকুরিতে কোটাসুবিধার আসল উদ্দেশ্যই সকল নাগরিকের সুযোগের সমতা নিশ্চিত করা। সুযোগের সমতা নিশ্চিত করাটা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক অঙ্গীকার। কারণ, সুযোগের সমতা নিশ্চিত না হলে ‘সাম্য’, ‘মানবিক মর্যাদাবোধ’ ও ‘সামাজিক সুবিচার’ নিশ্চিত হবে না। নিশ্চিত হবে না সংবিধানের ১০ অনুচ্ছেদে প্রতিশ্রুত ন্যায়ানুগ ও সাম্যবাদী সমাজলাভের প্রতিশ্রতি, বৈষম্য বাড়তে থাকলে ৯ অনুচ্ছেদে অভীষ্ট জাতীয় ঐক্য ও সংহতি। ফলে, সামগ্রিকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা ও এই নীতিসমূহ হইতে উদ্ভূত রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতিসমূহ, যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনারই অংশ।
বিষয়টি অধিকতর গভীরভাবে অনুধাবনের লক্ষ্যে পাঠকগণকে আরো ৩টি প্রশ্ন করছি:
প্রশ্ন ৬: মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাতীয় জীবনের সর্বত্র প্রতিষ্ঠা করা না গেলে পাকিস্তানি শাসনব্যবস্থা ফেলে ভেঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার তাৎপর্য কি ক্ষুন্ন হয়?
(৭) মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের অন্যতম পূর্বশর্ত প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগের ক্ষেত্রে যুক্তিসঙ্গত সমতা প্রতিষ্ঠা করা। আর, যুক্তিসঙ্গত সমতা যদি প্রতিষ্ঠা করা না যায়, যদি কোনো গোষ্ঠী তাদের প্রাপ্যাংশের অতিরিক্ত সুবিধা পায় সেটা কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে বেইমানি হয়ে যায় না? সেটা কি ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মদানের উদ্দেশ্যের সাথে বেইমানি হয়ে যায় না?
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্রতি কিছু প্রশ্ন
আমার ধারণা মতে মহান মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাসহ আপামর বাঙালি জাতির আত্ননিয়োগ ও প্রাণোৎসর্গ করার মূল উদ্দেশ্যই ছিল বৈষম্য বিলোপ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অন্যতম মূল উপকরণ হলো ‘সাম্য’।
সরকারি চাকুরিতে সুযোগের সমতাকে অধিকতররূপে প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যেই প্রণয়ন করা হয়েছে কোটাব্যবস্থা, কাউকে বঞ্চিত/ বৈষম্যের শিকার করার উদ্দেশ্যে নয়।
এহেন ক্ষেত্রে আমার প্রশ্ন:
(৮) কোটাব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে বাতিল করে দেওয়ার দাবি কি যৌক্তিক? এই দাবি কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধানের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়?
(৯) মুক্তিযোদ্ধা কোটা কিংবা অন্য যে কোন বিশেষ কোটাকে কোটা তালিকা থেকে বাদ দেওয়া কিংবা কোটার হার কমানোর ক্ষেত্রে আপনাদের দাবির যৌক্তিকতা থাকতে পারে। কিন্তু, সেই ক্ষেত্রে, আপনাদের দাবির ভিত্তি হওয়া উচিৎ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ২৯(৩) দফা। আপনারা যেসব গোষ্ঠীর কোটা সুবিধা বাতিল চান, সেসব গোষ্ঠী বর্তমান আর্থসামাজিক বাস্তবতায় ‘অনগ্রসর’ কি না, এবং ’অনগ্রসরতার কারণে সরকারি চাকরিতে তাদের অংশগ্রহণের হার’ জাতীয় গড়ের চেয়ে কম কি না, সেই ব্যাপারে আপনাদের নিকট সুনির্দিষ্ট তথ্য আছে কি? আপনাদের নিকট সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলে আপনার মহামান্য হাইকোর্ট, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বা মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের নিকট এই ধরণের তথ্য চেয়ে আবেদন করেছেন কি?
(১০) আপনাদের নিকট বিশেষ কোনো কোটাকে সংবিধানের মূলনীতি, অধিকার ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী মনে হলে উক্ত কোটা রহিত করার জন্য মহামান্য হাইকোর্টে রিট করেছেন কি? কোনো কোটা অসাংবিধানিক হলে উক্ত কোটার ফলে কোটাহীন ব্যক্তিদের অধিকার ক্ষুন্ন হয়। এ কারণে রিট করাকে প্রয়োজনীয় মনে করেন কি?
(১১) মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল উদ্দেশ্যই ছিল আপনাদেরকেসহ এ জাতির সকলের মুক্তি। আপনারা যে সমস্যা নিয়ে লড়াই করছেন, সেই সমস্যার সমাধানও রয়েছে সেই মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, এবং সেই মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত সংবিধানে। সুতরাং, আপনাদেরকে একটি স্বাধীন দেশ এনে দেওয়ার কারিগর মুক্তিযোদ্ধাগণকে অবজ্ঞা করা আপনাদের বিবেকসম্মত বলে মনে হয় কি?
জাতির জীবিত কাণ্ডারীদের সমীপে
বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ এ জাতির কাণ্ডারী। জাতির ক্রান্তিলগ্নে তারা নিজ জীবনকে বিপন্ন করে, পরিবারকে অনিশ্চয়তার মুখে ফেলে দিয়ে এক স্বপ্নের নেশায় ছুটেছিলেন: স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র, যেখানে থাকবে না বৈষম্য, অবিচার, অমানবিকতা। সেই স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপ অর্জিত হয়েছে ১৯৭১ সালে রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে। কিন্তু, অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির পথ এখনো অনেক বাকি। এ জাতির অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্বপ্নের সোনার বাংলা ধারণা দিয়েছিলেন, সেই পথে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু তনয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ২টি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০, ডিজিটাল বাংলাদেশ উদ্যোগ ও স্মার্ট বাংলাদেশ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এসব পরিকল্পনা ও উদ্যোগের মূল দর্শন: দারিদ্র্যবান্ধব, অন্তর্ভূক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়ন। এ লক্ষ্যে, এসডিজি অর্জনকে রূপকল্প ২০৪১ বা ২য় প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় অঙ্গিভূত করা হয়েছে। এসব পরিকল্পনায় এসডিজি-১০ এর সাথে সঙ্গতি রেখে সমাজের সকল স্তর হতে সকল প্রকার বৈষম্য হ্রাস ও এসডিজি ১৬ অনুযায়ী সামাজিক ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা কৌশল প্রণয়ন করা হয়েছে। এমতাবস্থায়, এসব পরিকল্পনাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবেও উল্লেখ করা যায়; এবং এসব কাজকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনের অসমাপ্ত কাজ বলেও অভিহিত করা যায়।
১৯৭২ অস্ত্রসমর্পণের সময় জাতির বীর সন্তানের হাত উঁচিয়ে জাতির পিতাকে কথা দিয়েছিলেন, জাতির অর্থনৈতিক-সামাজিক মুক্তির অসমাপ্ত কাজগুলো করবেন; মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের কাজগুলো আজীবন করে যাবেন।
(১২) জাতির সূর্যসন্তান, আমাদের পথপ্রদর্শক, জাতির দুঃসময়ের কাণ্ডারি বীর মুক্তিযোদ্ধাগণকে সশ্রদ্ধ সালাম প্রদর্শনপূর্বক অনুরোধ করতে চাই; আপনারা ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের’ যেই মন্ত্রবলে আপন প্রাণ বাজী রেখে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, সেই মন্ত্রকে কীভাবে দিকনির্দেশক হিসেবে ব্যবহার করে আমরা প্রত্যেকটি জাতীয় সমস্যার সমাধান করতে পারি, সেই ব্যাপারে এই জাতিকে দিকনির্দেশনা দিন। ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা’ প্রশ্নে এ জাতির কিছু অপরিপক্ব সন্তান যারা না বুঝে আপনাদেরকে গালমন্দ করছে, তাদের পক্ষ হতে আমি আপনাদের নিকট ক্ষমা চাচ্ছি। ১৯৭১ সালের ক্রান্তিকালে যেই বিবেক, যেই চেতনা ও যেই প্রেরণাকে সামনে নিয়ে জাতিকে মুক্ত করতে অগ্রগামী হয়েছেন, সেই বিবেক-চেতনা-প্রেরণার আলোকে ‘কোটা’ নিয়ে উদ্ভূত সমস্যার সমাধানে আবারো একটু অগ্রগামী ভূমিকা পালন করতে পারেন কি? হে পথপ্রদর্শকগণ, আপনারা অস্ত্রসমর্পণ অনুষ্ঠানে অশ্রুসিক্ত নয়নে জাতির পিতাকে যে প্রতিশ্রতি দিয়েছিলেন, সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের সময় ও সুযোগ এখনও আপনাদের একটুও অবশিষ্ট নেই কি? ১৯৭১-এ নিজের জীবন ও পরিবারের উর্দ্ধে যেভাবে দেশের স্বার্থ, আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন, সেই প্রাধান্য বজায় রেখে উদ্ভূত পরিস্থিতির সমাধানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন স্তরের কর্তৃপক্ষকে কোনো প্রায়োগিক সুপারিশ করতে পারেন কি?
মুক্তিযোদ্ধার রক্ত যাঁদের শরীরে
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে আপনাদের পিতা, মাতা, পিতামহ, মাতামহ, পিতামহী, মাতামহী যাঁরা যে চেতনা ও আদর্শকে ধারণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, সেই চেতনা ও আদর্শ এই জাতির অন্যান্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়াটাই আপনাদের দায়িত্ব বলে আমি মনে করি। আপনার পূর্বসূরীগণ সাম্য-মানবিক মর্যাদাবোধ-সামাজিক সুবিচারের মন্ত্রে মুগ্ধ হয়ে যেভাবে পরিবারের স্বার্থের উর্দ্ধে জাতিকে দেখেছেন, সেই চেতনা এই দেশের প্রত্যেকের মধ্যে গড়ে তোলা না হলে এদেশের স্বাধীনতা অর্থবহ হবে না। আমাদের চিন্তা, চেতনা, আচরণ, ধৈর্য ও কর্মের মাধ্যমে সেই চেতনা এদেশের সকলের মধ্যে পৌঁছে দিতে হবে। আপনাদের সমীপে আমার প্রশ্ন:
প্রশ্ন ১৩: আপনার পূর্বসূরীগণ যেভাবে নিজের ও পরিবারের স্বার্থের উর্দ্ধে জাতিকে রেখে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল, সেই রূপ চেতনা নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আপনাদের কর্ম, আচরণ, ত্যাগ-তিতিক্ষার সমাজের সর্বস্তরে বাস্তবায়নের জন্য আপনারা অগ্রগামী নেতৃত্ব দেবেন কি?
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আছে যতদিন বাংলাদেশ রাষ্ট্র আছে ততদিন। আমাদের জাতীয় জীবনের যে কোনো মুহূর্তের যে কোনো সমস্যার সমাধান দেবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। আমি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্তৃপক্ষ, বিভিন্ন অংশীদার ও জনগণকে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত সংবিধানের আলোকে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানে সুন্দর পদক্ষেপ দ্রুত গ্রহণের নিবেদন করছি।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী যে কোনো সিদ্ধান্ত ও কার্যকলাপ আমাদের জাতীয় অস্তিত্ব ও সংহতিকে মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন করতে পারে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা, ও তার অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু তনয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার রূপকল্প ২০৪১-এর মাধ্যমে দারিদ্র্যমুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, শোষণহীন, বৈষম্যহীন, নিরাপদ, টেকসই ও সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণকে বাস্তবায়ন করার জন্য সর্বস্তরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রসার ও প্রয়োগ অপরিহার্যরূপে আবশ্যক।
সুতরাং, বাংলাদেশের সরকারি চাকুরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা যতটুকু হলে সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয়, ততটুকু রাখাটাই হবে সকল পক্ষের জন্য মঙ্গলজনক।
কোটা ব্যবস্থা নিয়ে আরো পড়ুন: সরকারি চাকুরিতে কোটা : সংবিধান কী বলে?
রেফারেন্স
১. গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান
৩. জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১
৪. এম এম আর জালাল এবং বিদ্যুৎ দে (২০২০). মুক্তিযুদ্ধের চেতনা | bdnews24.com
৫. মেহেরুন্নেসা (২০২০). মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে কী বোঝায় | jugantor.com
৬. মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের ভিশন ও মিশন