১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে বেগম রোকেয়ার জন্ম। তাঁর বাবা জমিদার হলেও ছিলেন অত্যন্ত রক্ষণশীল।ফলে ঘরের বাইরে যাওয়া ছিল তাঁর জন্য অত্যন্ত দুষ্কর।তখন পর্দার নামে মেয়েদের বাড়ির ভেতরে থাকতে হতো।তাই পড়াশোনা তো দূরের কথা কোনো প্রয়োজনেই নারীরা সহজে বাড়ির বাইরে যেতে পারতেন না।কেননা তখন ধর্মীয় কুসংস্কারে আক্রান্ত ছিল গোটা সমাজব্যবস্থা।
এতসব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে তিনি হয়ে উঠলেন নারী জাগরণের অগ্রদূত। নারী শিক্ষা, নারী অধিকার ও নারীর ক্ষমতায়নে তাঁর ভূমিকা চিরস্মরণীয়।প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি না থাকলেও লেখালেখি চালিয়ে গেছেন আমৃত্যু।তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, ভাষাবিদ, দার্শনিক, সমাজ-সংস্কারক ও মানবতাবদী ব্যক্তিত্ব।তিনি তাঁর সাহিত্য সাধনা, সংগ্রাম এবং বিভিন্ন সংগঠন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুসলিম নারীদের জাগরণ ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় আজীবন কাজ করেছেন। মতিচূর, সুলতানার সপ্ন ও অবরোধবাসিনী- এসব কালজয়ী গ্রন্থের মধ্য দিয়ে তিনি মূলত বাংলার পিছিয়ে পড়া ও অবহেলিত নারীদের অধিকার আদায়ের স্বপ্ন দেখেছেন। তাঁর এসব লেখনীর আবদার আজও পাঠক সমাজে নন্দিত ও প্রাসঙ্গিক।
নারী শিক্ষার প্রসারের জন্য তিনি ১৯০৯ সালে সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯১৬ সালে সমাজে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কলকাতায় গড়ে তুলেন আঞ্জুমানে খাওয়াতিনে ইসলাম নামে একটি মুসলিম মহিলা সমিতি। সেই ধারাবাহিকতায় আজ বাংলায় নারী শিক্ষার পৃথক স্কুল ও কলেজ আছে। আছে উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়।
সভ্যতার অভাবনীয় সাফল্যের পেছনে নারী ও পুরুষের সমান অবদান অনস্বীকার্য। নারীকে বাদ দিয়ে পুরুষের একক অংশগ্রহণের মাধ্যমে সমাজের উন্নয়নের কথা কল্পনা করা যায় না। সর্বশেষ জনশুমারি অনুযায়ী দেশে নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৫৬ লাখ ৮৬ হাজার যা মোট জনসংখ্যার অর্ধেরও বেশি। তাই এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে উপেক্ষা করে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করা কোন ভাবেই সম্ভবপর নয়। সেই বিষয় উপলব্ধি করেই বর্তমান সরকার নারীর ক্ষমতায়নে নিরবিচ্ছিন্ন কাজ করে যাচ্ছে।ফলে আজ সমাজ তথা রাষ্ট্র জীবনের সকল পর্যায়ে নারীর সরব অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়েছে। এককালের পিছিয়ে পড়া নারীরা এখন দেশ বিনির্মাণে পুরুষের সাথে তাল মিলিয়ে সমান অবদান রেখে যাচ্ছে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এই সত্য অনেক আগেই অনুধাবন করে তাঁর রচিত বিখ্যাত ‘নারী’ কবিতায় বলেছেন-
“বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর”
পরিশেষে বলতে চাই, নারীর সার্বিক উন্নয়নের জন্য বেগম রোকেয়ার যে আপ্রাণ চেষ্টা ও সংগ্রাম তা বাস্তবায়ন তথা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সরকারসহ দেশের সকল স্তরের মানুষকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। আর তা হলেই আগামীর বাংলাদেশ হবে একটি সুখী ও সুন্দর বাংলাদেশ।