প্রিয় মানুষের চিঠির জন্য অপেক্ষা, চিকিৎসার অভাবে সীমাহীন ভোগান্তি, পায়ে হেঁটে মাইলের পর মাইল পথ চলা, বৃষ্টির জন্য কৃষকের আকাশপানে চেয়ে থাকা, দুর্যোগের ঘনঘটায় হতভম্ব হয়ে যাওয়া, এমনকি আর্থিক লেনদেনের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যাংকে দাঁড়িয়ে থাকার দিনগুলো দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলা বাংলাদেশের অতীত দিনের ঘটনায় রূপ নিয়েছে।দিন বদলের পালায় বাংলাদেশের এগিয়ে চলার অন্যতম বাহন তথ্য ও প্রযুক্তি খাতের ব্যাপক উন্নয়ন।যেন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ঢেউ এসে আছড়ে পড়েছে বাংলার বুকে।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লব বিজয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অদম্য অগ্রগতিতে এগিয়ে যাওয়া বর্তমান সরকার বহুমাত্রিক পরিকল্পনা-কর্মকৌশল গ্রহণ ও সফল বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকারের প্রতিশ্রুত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাস্তবায়ন সম্পন্ন হয়েছে। এখন সামনে সরকারের নতুন লক্ষ্য ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১২ই ডিসেম্বর ২০২২ সালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের (বিআইসিসি) অনুষ্ঠানে ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস-২০২২ উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে সর্বপ্রথম ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার কথা বলেন।তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যৎ স্মার্ট বাংলাদেশ হবে সাশ্রয়ী, টেকসই, জ্ঞানভিত্তিক, বুদ্ধিদীপ্ত এবং উদ্ভাবনী’। অর্থাৎ সব কাজই হবে স্মার্ট। স্মার্ট বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটঃ ডিজিটাল বাংলাদেশ, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি প্রেরণাদায়ী অঙ্গীকার। তাই সরকার অত্যাধুনিক পাওয়ার গ্রিড, গ্রিন ইকোনমি, দক্ষতা উন্নয়ন, ফ্রিল্যান্সিং পেশাকে স্বীকৃতি প্রদান এবং নগর উন্নয়নে কাজ করছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে সরকার তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রথমত, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রযুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় জাতীয় ই নলেজ স্ট্রিয়ার বিনির্মাণ, জ্ঞানভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনায় অবকাঠামো নির্মাণ; স্থানীয় পর্যায়ে আন্তর্জাতিক স্টার্টআপ মেন্টর ও বিজনেস কোচ সৃষ্টি অল্টারনেটিভ স্কুল ফর স্টার্টআপ এডুকেটরস অব টুমরো (অ্যালেট এবং সেন্টার ফর লার্নিং ইনোভেশন অ্যান্ড ক্রিয়েশন অব নলেজ (ক্লিফ) প্রতিষ্ঠা।
দ্বিতীয়ত, উদ্ভাবনী জাতি গঠনে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সক্ষমতা তৈরি, মানসম্মত উদ্ভাবন এবং নিয়ন্ত্রণের ওপরা উদ্যোক্তা তৈরিতে নতুন উদ্যোগ হিসেবে সেলফ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড এন্টারপ্রেনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট (সিড) এবং কনটেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং ও লিংকেজ ল্যাব (সেল) স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
তৃতীয়ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল সমাজ বিনির্মাণে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিতকরণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নে আইসিটি বিভাগ ইতোমধ্যে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে অন্যতম বিসিসির এনহ্যান্সিং ডিজিটাল গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ইকোনমি প্রকল্পের আওতায় সেন্টার ফর ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভুলেশন ও ডিজিটাল লিডারশিপ একাডেমি প্রতিষ্ঠা এবং চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা
‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার ভিত্তি চারটি। এগুলো হচ্ছে— স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সমাজ। স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে এ চারটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রকে চিহ্নিত করে অগ্রসর হলে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের কোনো অবশিষ্ট থাকবে না। স্মার্ট নাগরিক ও স্মার্ট সরকার এর মাধ্যমে সব সেবা এবং মাধ্যম ডিজিটালে রূপান্তরিত হবে। আর স্মার্ট সমাজ ও স্মার্ট অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করলে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠন এবং ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এককথায় সব কাজই হবে স্মার্ট। যেমন স্মার্ট শহর ও স্মার্ট গ্রাম বাস্তবায়নের জন্য স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট পরিবহন, স্মার্ট ইউটিলিটিজ, নগর প্রশাসন, জননিরাপত্তা, কৃষি, ইন্টারনেট সংযোগ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। অনলাইনে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এক শিক্ষার্থী, এক ল্যাপটপ, এক স্বপ্নের উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হয়েছে। এর আওতায় সব ডিজিটাল সেবা কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বিত ক্লাউডের আওতায় নিয়ে আসা হবে। ইতোমধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের নাম পরিবর্তন করে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ গঠন করেছে বাংলাদেশ সরকার।
স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সরকারের যেমন অপার সম্ভাবনা রয়েছে; পাশাপাশি রয়েছে নানানমুখী চ্যালেঞ্জও।কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা(এআই)প্রযুক্তির অভাব, তথ্যের অনিরাপত্তা , দক্ষ জনশক্তির অভাব, বিনিয়োগের অভাব, দুর্নীতি, সুশানের অভাবসহ টেকসই উন্নয়ান নিশ্চিতকরণের পথে বাঁধা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সরকারকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করেছে। আর এই সংকট মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সেক্টর, উন্নয়ন সংস্থা, সুশীল সমাজসহ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।